
ছবি: সংগৃহীত
দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান দাবদাহ পরিস্থিতি অবশেষে কিছুটা প্রশমিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সোমবার থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে এবং আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বিস্তৃত হতে পারে। এ অবস্থায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সকালে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, “আজ থেকেই দেশের অনেক জায়গায় তাপদাহ কমে আসবে। তবে পুরোপুরি থেমে যাবে না। খুলনা অঞ্চলের কিছু এলাকায় এখনও বিচ্ছিন্নভাবে তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আগামীকাল থেকে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হবে।”
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে, যার কারণে এসব অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে এসব এলাকায় দিনমজুর ও কৃষিকাজে নিয়োজিত মানুষদের প্রচণ্ড কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাকি জেলা, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ, এবং রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও শেরপুর জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যেটিও জনজীবনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানান, “আজ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক এলাকায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের পূর্বাঞ্চল ধরে একটি বৃষ্টিপ্রবণ বেল্ট গঠিত হয়েছে, যা ফেনী, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলজুড়ে আগামীকাল থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টিপাত ধীরে ধীরে দেশের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের দিনে খুলনা বিভাগের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে, তবে অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এতে গরমের চাপ কিছুটা কমবে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করে কয়েকটি সতর্কতা জারি করেছে। এতে নাগরিকদের বাড়ির ভিতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে—
বজ্রপাত শুরু হলে দ্রুত ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিন।
জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন এবং সম্ভাব্য সকল বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্লাগ খুলে রাখুন।
যাত্রা না করাই ভালো, বিশেষত উন্মুক্ত রাস্তায় বা জলাশয়ের কাছাকাছি।
গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া বিপজ্জনক, তাই এড়িয়ে চলতে হবে।
কংক্রিটের মেঝেতে বসা বা শোয়া ও দেয়ালে হেলান না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিলাবৃষ্টির সময় ছাদে বা উন্মুক্ত স্থানে না থাকার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই দাবদাহে শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, কৃষি খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রোপা আউশ ও অন্যান্য মৌসুমি চাষাবাদে জলস্বল্পতা দেখা দেয়, ফসলের অকাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় কৃষিবিদ ও কৃষকরা আশাবাদী হয়েছেন যে এই বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে শস্যক্ষেত্র পানির অভাব কাটিয়ে উঠবে এবং উৎপাদন স্বাভাবিক হবে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও তাপঘাতজনিত অসুস্থতার রোগী আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন পানি সরবরাহ, ঘন ঘন বিশ্রামের ব্যবস্থা এবং সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে।
আগামীকাল থেকে যে বৃষ্টির প্রবণতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে, তার মাধ্যমে দেশের দীর্ঘদিনের দাবদাহ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিস্থিতির উন্নতি হলেও যেকোনো দুর্যোগের সময় নাগরিকদের সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ