
ছবি: সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর নিয়ে কিছুদিন ধরেই তৈরি হয়েছিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা। অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, টাইগারদের নির্ধারিত সফর বাতিল বা পেছানো হতে পারে। তবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে, লিটন দাসদের পাকিস্তান সফর পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বোর্ড।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সোমবার এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ীই মাঠে গড়াবে। চলতি মাসের ২১ মে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তানে পৌঁছাবে বাংলাদেশ দল। আমিরাতে দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পরই পাকিস্তান সফরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে টাইগাররা।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি। পাকিস্তানে সম্ভাব্য উত্তেজনা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে সফরের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ইনশা-আল্লাহ, সবকিছু ঠিকঠাকই হবে।”
ফারুক আরও জানান, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গত শনিবার রাজধানীর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবির বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে একটি বিশেষ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অধিকাংশ সদস্য সফরের পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানায় বিসিবি।
সূচি অনুযায়ী, পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের দল খেলবে মোট পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এর মধ্যে প্রথম দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ফয়সালাবাদের ঐতিহাসিক ইকবাল স্টেডিয়ামে, যথাক্রমে ২৫ ও ২৭ মে। এরপর বাকি তিনটি ম্যাচ—৩০ মে, ১ জুন এবং ৩ জুন অনুষ্ঠিত হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। সবকটি ম্যাচই শুরু হবে স্থানীয় সময় রাত ৮টায়।
পাকিস্তানে পৌঁছানোর পর ২২ ও ২৪ মে ফয়সালাবাদে অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল। এরপর ২৫ মে শুরু হবে কুড়ি ওভারের উত্তেজনাপূর্ণ এই সিরিজ। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি) অনুযায়ী পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দলের তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলার কথা ছিল। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে বিসিবি এবং পিসিবি যৌথভাবে ওয়ানডে সিরিজ বাতিল করে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সিরিজটি শুধুমাত্র দুই দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক আরও মজবুত করতেই নয়, বরং বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস, কম্বিনেশন ও প্রস্তুতি যাচাইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
এদিকে সিরিজ শেষে পাল্টা সফরে বাংলাদেশে আসবে পাকিস্তান। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে তিন ম্যাচের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই। সবকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান সফর নিয়ে বরাবরই দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বারবারই সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে এ বছর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিসিবি আর দেরি না করে সফরের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্রিকেটাররাও প্রস্তুত রয়েছেন একটি কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ খেলতে।
এই সফর শুধু খেলোয়াড়দের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক প্রস্তুতির একটি বড় পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, শামিম পাটোয়ারীসহ সিনিয়র ও জুনিয়রদের মিশেলে গড়া এই দলে বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াড গঠনের অনেক সংকেতও পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ