
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানি খাতে নগদ প্রণোদনা ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সরকার আগামী বাজেটে রপ্তানিকারকদের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করছে। তবে গত অর্থবছরের বাজেটে এই বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, টানা দ্বিতীয় বছর রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা কমানো হচ্ছে, যা সরকারের দীর্ঘমেয়াদী নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) বিধি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা দেওয়া আর সম্ভব হবে না। তবে, রপ্তানি প্রণোদনা কমানোর ফলে যে ক্ষতি হবে, তা পূরণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিলের ওপর ছাড়, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধা এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার কথা ভাবছে সরকার।
প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ৪৩টি রপ্তানি পণ্য নগদ প্রণোদনার আওতায় রয়েছে। তবে প্রণোদনা কমানোর ফলে, এই পণ্যের মধ্যে শুধুমাত্র কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা কমানো হবে, কিন্তু সেগুলোর আওতায় রপ্তানিকারকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কিছু বিকল্প ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। পোশাক রপ্তানি খাতে বর্তমানে সব বাজারে ০.৩০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়, আর নতুন বাজারে প্রবেশে ২ শতাংশ সহায়তা দেওয়া হয়। কৃষিপণ্য, আলু, প্রক্রিয়াজাত মাংস রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। চামড়ার বিশেষ ধরনের রপ্তানিতে ৬ শতাংশ নগদ সহায়তা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রণোদনা পাওয়া খাতগুলো পরিবর্তে নতুন, সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা উচিত, যাতে বৈশ্বিক বাজারে দেশের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা বাড়ে এবং অর্থনীতির অন্যান্য খাতের প্রসার ঘটে। তবে, রপ্তানিকারকরা এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, প্রণোদনা কমানোর ফলে রপ্তানি খাতে বিপর্যয় আসতে পারে এবং দেশীয় শিল্পের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। তারা আশঙ্কা করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশ আমদানি-নির্ভর এক রপ্তানি শিল্পে পরিণত হতে পারে, যার ফলস্বরূপ দেশের রিজার্ভ সংকুচিত হয়ে ডলার সংকট আরও বাড়বে।
এই পদক্ষেপের বিষয়ে সরকার একাধিক সমর্থনমূলক সিদ্ধান্তও নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা। বিশেষত সিংগাপুরের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে, যার ফলে রপ্তানি পণ্যগুলোর বাজার সম্প্রসারিত হবে। এছাড়া, চীন ও জাপানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ যাতে সফলভাবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারে, সেজন্য এই বাজেট প্রস্তাবনা কার্যকর হলে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে রপ্তানি খাতের উন্নতির পাশাপাশি নতুন ক্ষেত্রগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী করতে।
এদিকে, দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যত গড়তে রপ্তানি প্রণোদনার এসব পদক্ষেপের পাশাপাশির নানা দিক বিবেচনা করা প্রয়োজন, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ