
ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ‘জুলাই গণহত্যা’ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে সরকারের তদন্ত সংস্থা। সোমবার (১২ মে) সকাল ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর, প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা এবং সংস্থার আরও দুই সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা সরাসরি ‘জুলাই গণহত্যা’র পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নির্দেশনা দিয়েছেন—এমন প্রমাণ তারা পেয়েছেন। একইভাবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন আইজিপিও এই অপরাধে সমানভাবে দায়ী বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘জুলাই গণহত্যা’ ইস্যুতে দাখিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারীদের মতে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত হয় সহিংস গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আন্দোলনরত জনগণের ওপর চালানো দমন-পীড়ন।
গণমাধ্যমে আসছে সরকারি ব্যাখ্যা
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে। এই ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত শেষ
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেয়। এতে বলা হয়, ‘জুলাই গণহত্যা’ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। সেই সময় তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্ব দেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। প্রসিকিউশনের সময় প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আদালত এই সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন।
আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, তদন্তে প্রচুর সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি সংগ্রহ করা হয়েছে, যা এই গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তৎকালীন সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট করে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আইন সংশোধন
এই তদন্ত প্রতিবেদন এমন এক সময় জমা দেওয়া হলো, যখন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি রাজনৈতিক দলের বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনার জন্য ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন’ এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’ সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করেছে। এসব আইনি উদ্যোগের লক্ষ্য, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর নেতৃবৃন্দ দায়মুক্তি না পায়।
একইসঙ্গে সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া
ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরপরই প্রসিকিউশন এখন চার্জ গঠনের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু করবে। সম্ভাব্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে পারে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।
এই মামলার রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করছে জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ও ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি, এই ঘটনার বিচার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ