
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এখন সেই নিঃস্ব জনগণ আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।
সোমবার (১২ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, “বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। আওয়ামী লীগ বছরের পর বছর মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ ভুলে গিয়েছিল, শেষ কবে তারা সত্যিকার অর্থে ভোট দিয়েছিল। এ কারণে দলটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটাধিকার হরণ ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ধ্বংসের অভিযোগ এনে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি এবং দেশের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে ১,৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আমাদের কাছে এই সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু এত প্রাণহানির পরেও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনার চিহ্ন দেখা যায় না। বরং তারা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে অনেক নিরীহ মানুষকে জঙ্গি বলে চিহ্নিত করেছে।”
প্রেস সচিবের মতে, দলটি এক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মানুষের কণ্ঠরোধ করে রেখেছিল। “তাদের নিষিদ্ধ করার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তা ও মুক্তির অনুভূতি ফিরে এসেছে। বহুদিন পর মানুষ মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে,”—বলেন শফিকুল।
সাংবাদিক ইউনিয়নের ‘প্লটভিত্তিক’ রাজনীতি ও বেতন বৈষম্যের কঠোর সমালোচনা
সংবাদকর্মীদের অধিকারের প্রশ্নে প্রেস সচিব শফিকুল আলম দেশের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকাও তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে ইউনিয়নগুলোর মূল আগ্রহ ছিল পূর্বাচলের প্লট পাওয়া। তারা সাংবাদিকদের প্রকৃত স্বার্থ নিয়ে কোনো কথা বলেনি, কোনো লড়াই করেনি। মালিকপক্ষের সঙ্গে দর-কষাকষির নামে নিজেরাই সুবিধাভোগী হয়ে গেছে। আমাদের সাংবাদিকদের ভয়াবহভাবে ঠকানো হয়েছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “একজন পেশাদার সাংবাদিকের ন্যূনতম বেতন হওয়া উচিত ৩০ হাজার টাকা। এটি শুধু একটি আর্থিক ইস্যু নয়, এটি পেশার মর্যাদার বিষয়। যারা এই বেতন দিতে পারে না, তাদের পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন সোহেল এবং নির্বাহী কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত শফিকুল আলমের বক্তব্যে উঠে আসে একটি স্পষ্ট বার্তা—আওয়ামী লীগের পতনে দেশ এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। যেখানে ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক মর্যাদা রক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এই সরকার চায়, জনগণ যেন নিজের দেশের মালিকানা আবার ফিরে পায়—সেই লক্ষ্যেই সব পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ