
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আসন্ন পাকিস্তান সফর নিয়ে কিছুদিন আগেও যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, কেবল রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল খেলাধুলার জগতে— বিশেষ করে ক্রিকেটে। এরই মধ্যে স্থগিত হয়েছিল পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এর ম্যাচসমূহ। এই অস্থির পরিবেশে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর নিয়েও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। তবে সদ্য ঘোষিত যুদ্ধবিরতির ফলে ফের আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বিসিবি আগেই ঘোষণা করেছিল, মে মাসেই পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তান সফরে যাবে বাংলাদেশ দল। এই সফরের জন্য স্কোয়াডও ঘোষণা করা হয়েছিল, যেখানে লিটন দাসকে নেতৃত্বে রেখে তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে শক্তিশালী দল। মূল সিরিজ শুরু হওয়ার কথা ২৫ মে থেকে। তবে হঠাৎ করেই অঞ্চলজুড়ে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে উঠলে পুরো সফরের ভবিষ্যৎ পড়ে যায় অনিশ্চয়তার মুখে।
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। সীমান্তে গোলাগুলি, বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ক্রীড়াঙ্গনেও আঘাত হানে এই সংঘাত। পিএসএল এবং আইপিএলের মতো বৃহৎ টুর্নামেন্টগুলোও সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায়। ফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে— তাহলে কি বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরও বাতিল হয়ে যাবে?
এই দুশ্চিন্তার মধ্যেই গত শনিবার ভারত ও পাকিস্তান পারস্পরিক সমঝোতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কূটনৈতিকভাবে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে এই বিরতিকে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ক্রীড়াক্ষেত্রেও। যুদ্ধবিরতির পরদিন থেকেই পিএসএলের বাকি ম্যাচগুলো ফের আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। একইভাবে আইপিএল নিয়েও ইতিবাচক পরিকল্পনায় ফিরেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
বিসিবিও এই শান্তির ইঙ্গিতকে সামনে রেখে পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে আশাবাদী। ওদের সবকিছু আপাতত স্থগিত হয়ে আছে, তবে যুদ্ধবিরতির কারণে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা তো দুবাইয়ে যাচ্ছি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে। সেগুলো শেষ হলে পরিস্থিতি বুঝে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
বাংলাদেশ দল আপাতত দুবাইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। এসব ম্যাচ হবে মূল সিরিজে যাওয়ার পূর্বে দলের ফর্ম ও প্রস্তুতির একটি ভালো সূচক। তবে শুধু ক্রিকেটীয় দিক থেকেই নয়, এই সফর নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফারুক আহমেদ বলেন, “প্রস্তুতি ম্যাচগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে আমরা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ও মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করতে পারব। পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা উজ্জ্বল, ইনশা-আল্লাহ।”
যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তানে শুরু হয়েছে নতুন করে পিএসএলের বাকি ৮ ম্যাচ আয়োজনের তোড়জোড়। পিসিবি চাইছে, পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১৮ মে-র মধ্যে ফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করতে। এটি বাস্তবায়িত হলে বোঝা যাবে যে পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং বড় আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের উপযুক্ত নিরাপত্তা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এই বাস্তবতা বাংলাদেশের সফরের জন্যও ইতিবাচক সিগন্যাল দিচ্ছে। বিসিবি সূত্র জানায়, পিএসএল সফলভাবে আয়োজিত হলে বাংলাদেশ দলও নির্ধারিত সময়েই পাকিস্তান সফর করতে পারবে।
বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সর্বদা খেলাধুলাকে রাজনীতি থেকে পৃথক রাখতে চায়। তবে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির যে প্রভাব ক্রীড়াঙ্গনে পড়ে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তাই সবদিক বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যুদ্ধবিরতির খবরে যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে, তা বোর্ড প্রধানদের কথাতেই পরিষ্কার।
বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও যুদ্ধবিরতির ফলে একটি বড় বাধা দূর হয়েছে বলেই মনে করছে বিসিবি। প্রস্তুতি ম্যাচ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির আরো কিছু পর্যবেক্ষণের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিসিবি আশাবাদী যে— পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে টাইগাররা ২৫ মে থেকেই পাকিস্তানে মাঠে নামবে বহুল প্রত্যাশিত পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ