
ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে যুগোপযোগী করে এর আওতা ও প্রয়োগক্ষমতা আরও বিস্তৃত করতে “সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫”-এর খসড়াকে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। রোববার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নতুন এই অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি কিংবা সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আইনে অনুপস্থিত ছিল। বৈঠকে গৃহীত সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, সরকার যদি যুক্তিসংগত কারণে নিশ্চিত হয় যে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তবে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে বা সেই প্রতিষ্ঠানকে ‘তফশিলভুক্ত’ করতে পারবে এবং একই সঙ্গে তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে পারবে।
আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা ও প্রেক্ষাপট
২০০৯ সালে প্রণীত “সন্ত্রাসবিরোধী আইন”-এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধ ও এর সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা। তবে, আইনের বর্তমান কাঠামোয় শুধু ব্যক্তিকে ‘তফশিলভুক্ত সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণার বিধান থাকলেও কোনো প্রতিষ্ঠান বা সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার নির্দিষ্ট বিধান ছিল না। ফলে একটি মৌলিক দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছিল, বিশেষত এমন সময় যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান বা ছদ্মবেশী সংগঠনের ব্যবহার বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে আইনের সংশোধন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে বলে উপদেষ্টা পরিষদের ব্যাখ্যায় জানানো হয়। উপদেষ্টারা মনে করেন, শুধু ব্যক্তিকেই নয়, বরং প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা অনলাইন সত্তাও সন্ত্রাসে মদদদাতা হতে পারে। এসব সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণার আইনি ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকাটা নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অপরিহার্য।
অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিষেধাজ্ঞা
সংশোধিত অধ্যাদেশে আরেকটি নতুন সংযোজন হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সংক্রান্ত বিধান। যেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্তা অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ প্রচার, উস্কানি বা সহানুভূতি জাগানোয় লিপ্ত হয়, তাহলে তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে সরকার। এর মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত উগ্রবাদী প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একটি আইনি কাঠামো তৈরি হলো।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, নতুন অধ্যাদেশে “অভিযোজন” শব্দটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এর মানে, শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সত্তার চলমান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণেও সরকারকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশ জারি হতে পারে সোমবার
এই অধ্যাদেশটি আগামীকাল সোমবার, ১২ মে ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও এ বিষয়ে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, “দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে আরও কার্যকর ও প্রভাবশালী করতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।”
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে প্রবর্তিত এই সংশোধনী অধ্যাদেশটি শুধু আইনি কাঠামো নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে। এটির প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়নকারী, সহায়ক প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উগ্রবাদ ছড়ানো যেকোনো সত্তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এই আইন কার্যকর হলে দেশের নিরাপত্তা কাঠামোতে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ