
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ৮৭ ঘণ্টা বা তিন দিন সাড়ে ১৫ ঘণ্টার সামরিক উত্তেজনা—তাতেই কাঁপল উপমহাদেশের দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতি, আকাশপথ, বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ও গণমাধ্যমজগত। প্রতিটি ঘণ্টায় গড়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সময়ের হিসাবে, প্রতি মিনিটে লোকসানের অঙ্ক দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৬৬ হাজার মার্কিন ডলারেরও বেশি। আধুনিক যুদ্ধ কেবল গোলাবারুদ বা প্রাণহানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—তার প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজার, বহুজাতিক বাণিজ্য, খেলাধুলা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এমনকি বৈদেশিক মুদ্রার মানেও। ভারত-পাকিস্তানের এই স্বল্পকালীন যুদ্ধ-সংঘাত তাই হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধাক্কা।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করেছে ২০২৫ সালের ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত মোট ৮৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ধরে চলা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অর্থনৈতিক অভিঘাত।
৭ মে রাত ১টা ৫ মিনিটে ভারতীয় বিমানবাহিনী 'অপারেশন সিঁদুর' নামে এক আকাশ অভিযানে অংশ নেয়। ফ্রান্স থেকে আমদানিকৃত উন্নত রাফাল যুদ্ধবিমান এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়। এই যুদ্ধবিমানে ছিল দূরপাল্লার স্কাল্প ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদী গ্লাইড বোমা, যেগুলোর কার্যক্ষমতা প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। মাত্র ২৩ মিনিটের এই অভিযানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নয়টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়, যার মধ্যে অন্তত চারটি ছিল বেসামরিক স্থাপনা—যা নিয়ে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগও দেখা দেয়।
এই হামলার মাধ্যমে মূলত পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করা হয়। ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় তাদের স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিক্রিয়া যাচাই করে। এই পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয় ভারত ও ইসরায়েলের যৌথ প্রযুক্তিতে নির্মিত ড্রোন এবং বিভিন্ন ধরনের দূরনিয়ন্ত্রিত আকাশযান।
পাকিস্তানও চুপ করে থাকেনি। তারাও সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে উত্তর দেয়। পাকিস্তান বিমানবাহিনী চীনের তৈরি জেএফ-১৭ এবং অত্যাধুনিক জে-১০সি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে, যেগুলো দূরপাল্লার আকাশ-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত। ৭ মে রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তান তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে—যা রাফাল বিমানের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংস হওয়ার ঘটনা হিসেবে উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে তারা ভারতের ১২টি ড্রোনও ধ্বংস করে, যেগুলোর মধ্যে অনেক ছিল সামরিক ও নজরদারি কাজে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক ডিভাইস।
এই ৮৭ ঘণ্টার সংঘাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ভারত। মুম্বাইয়ের সেনসেক্স ও নিফটি দুই শেয়ার সূচক একত্রে প্রায় ৮২ বিলিয়ন ডলার মূলধন হারিয়েছে। আকাশপথে উড়োজাহাজ চলাচল স্থগিত থাকায় প্রতিদিন ৮০ লাখ ডলারের বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়, যার প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, পণ্য পরিবহণ এবং ট্যুরিজম খাতে।
সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে বিনোদন ও খেলাধুলার জগতে। চলমান জনপ্রিয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হঠাৎ করে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সম্প্রচারস্বত্ব, টিকিট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন চুক্তিতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার (৫ কোটি ডলার) লোকসান হয়েছে। সামরিক খাতে ব্যবহৃত অস্ত্র, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের খরচ প্রায় ১০ কোটি ডলার। ধ্বংস হওয়া যুদ্ধবিমানের মূল্য অন্তত ৪০ কোটি ডলার। বাণিজ্যিক মালবাহী পরিবহন ও আন্তঃদেশীয় লেনদেনে বিঘ্ন ঘটায় অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারতের সরাসরি ও পরোক্ষ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৮ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার।
পাকিস্তানের শেয়ারবাজারের সূচক এই সময়ের মধ্যে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পায়, যার ফলে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের মূলধন উধাও হয়। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) খেলা স্থগিত হওয়ায় সম্প্রচার ও বিজ্ঞাপন থেকে প্রায় ১ কোটি ডলার এবং আকাশপথে অচলাবস্থার ফলে ২ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়। তাদের প্রতিদিনের সামরিক ব্যয় ছিল গড়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র চালনায় ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৩০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।
সংঘাতের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে। ভারতীয় রুপি ও পাকিস্তানি রুপির মান আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন প্রকল্প স্থাপনে সতর্ক হয়ে ওঠে, কিছু কোম্পানি তাদের ঘোষিত বিনিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিতও করে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আধুনিক যুদ্ধে শুধু ট্যাংক-বিমান কিংবা রণাঙ্গনের জয়-পরাজয়ই মুখ্য নয়, বরং প্রকৃত মূল্য পরিমাপ হয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনজীবনের ওপর তার প্রতিক্রিয়ায়। ভারত-পাকিস্তানের এই ৮৭ ঘণ্টার যুদ্ধ সেই বাস্তবতাকে ভয়াবহভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।
এই স্বল্পমেয়াদী সংঘাতের ফলাফল একটি গভীর উপলব্ধি দিয়েছে যে, সীমান্তে সংঘর্ষ এখন আর কেবল সৈনিক ও সেনা সরঞ্জামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনধারার ওপরও এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধের খেসারত তাই শুধু রণাঙ্গনে নয়, প্রতিটি শহরের শেয়ারবাজার, প্রতিটি এয়ারপোর্ট, প্রতিটি স্টেডিয়াম এবং প্রতিটি ব্যবসায়ী হিসাবেও প্রতিফলিত হয়েছে।
এই ৮৭ ঘণ্টার প্রতিটি মিনিট যেন পরিণত হয়েছে অর্থনৈতিক দুঃস্বপ্নে—যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে উপমহাদেশের ইতিহাসে।
এ ধরনের সংঘাত ভবিষ্যতে এড়াতে হলে কেবল কূটনৈতিক সংলাপই নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে—এই বার্তা দিয়ে গেল যুদ্ধের রক্তিম ক্ষণগুলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ