
ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ দেশ স্পষ্টভাবে ইসরাইলবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কেবল যুক্তরাষ্ট্র বরাবরের মতো বন্ধু ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে।
বুধবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন আলজেরিয়ার প্রতিনিধি ওমর বেন্ডজামা। তিনি অভুক্ত ও অপুষ্টিতে ভোগা ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি প্রদর্শন করেন এবং ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত সাংবাদিক মরিয়ম আবু দাগ্গারের নিজের ছেলেকে লেখা আবেগঘন চিঠি পাঠ করেন। তার বক্তব্যে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ইসরাইলি প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন।
ড্যানন বলেন, “আপনি যে ছবিগুলো দেখিয়েছেন, সেগুলো যাচাই করা হয়নি। আমরা ইতোমধ্যে ওই শিশুদের মৃত্যুর কারণ যাচাই করেছি। অপুষ্টি নয়, অন্য কারণে তারা মারা গেছে।”
পাল্টা জবাবে আলজেরিয়ার প্রতিনিধি জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন এবং ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) রিপোর্টে স্পষ্টভাবে গাজার দুর্ভিক্ষ ও শিশুদের মৃত্যুর কারণ নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র বাদে বাকি ১৪টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে জানায়, গাজার দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক নয়, এটি মানবসৃষ্ট এবং এর জন্য সরাসরি দায়ী ইসরাইল।
ব্রিটেনের প্রতিনিধি বারবারা ওডওয়ার্ড বলেন, “আধুনিক ইতিহাসে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবার দুর্ভিক্ষ রেকর্ড হলো। অথচ সীমান্তে খাবারে ভরা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। শিশুদের প্রাণহানি প্রতিদিন বাড়ছে। এ দৃশ্য পুরোপুরি মানবসৃষ্ট।”
ফ্রান্স, রাশিয়া, চীনসহ অন্যান্য দেশও একই সুরে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে। তারা দাবি করে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে কৃত্রিম বাধা তৈরি করছে তেল আবিব প্রশাসন।
কেবল যুক্তরাষ্ট্র ব্যতিক্রমী অবস্থান নেয়। মার্কিন প্রতিনিধি ডরোথি শিয়া বলেন, “গাজায় ক্ষুধা একটি বাস্তব সমস্যা, আমরা তা অস্বীকার করি না। তবে IPC–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন যথাযথ নয়।” তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ করছে এবং তা তাদের অগ্রাধিকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদে ১৪ দেশের একসঙ্গে ইসরাইলবিরোধী অবস্থান অভূতপূর্ব। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা থাকায় এ অবস্থান কার্যকর প্রস্তাবে রূপ নেওয়া কঠিন। তবু এই সমালোচনা ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সদস্য দেশগুলো নেতানিয়াহু প্রশাসনের সমালোচনা করে জানায়, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ