
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা অপু বিশ্বাস। তার ঝলমলে পর্দার উপস্থিতি লাখো ভক্তকে আনন্দ দেয়, তবে ব্যক্তিগত জীবনের এক গভীর শূন্যতা আজও তাকে কুরে কুরে খায়। পূজার মৌসুম এলেই সেই শূন্যতার যন্ত্রণা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। কারণ, বহু বছর আগে মা-বাবাকে হারানো এই তারকা ধর্মীয় উৎসবের প্রতিটি আনন্দমুহূর্তে তাদের স্মৃতি মনে করে দুঃখে ভেঙে পড়েন।
বর্তমানে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মহাসপ্তমীর দিন রাজধানী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ দেশের সব মন্দিরেই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে সকাল থেকেই। উৎসবের এমন উজ্জ্বল পরিবেশে ঢাকায় অবস্থান করছেন অপু বিশ্বাস। তবে বাইরে কোথাও না গিয়ে তিনি নিজ বাসাতেই সময় কাটাচ্ছেন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে এক খোলামেলা আলাপচারিতায় অপু বিশ্বাস জানালেন, পূজার মৌসুমে তার মন সবসময় অদ্ভুত এক শূন্যতায় ডুবে যায়। তিনি বলেন, “পূজার সময় কোথাও যেতে মন চায় না। সবকিছুতেই মা-বাবার অভাব তীব্রভাবে অনুভব করি। প্রতিদিনই তাদের মিস করি, তবে পূজার সময় সেই কষ্টটা অনেক বেশি মনে হয়। পূজার দিনগুলোতে মনে হয়, মা-বাবা থাকলে আনন্দটা সম্পূর্ণ হতো। এখন মনে হয় আমি একাই, তাদের সান্নিধ্য ছাড়া পূজার আনন্দ অসম্পূর্ণ।”
শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে অপুর। তিনি বলেন, “বগুড়াতেই আমার শৈশব কেটেছে। তখন পূজা মানেই ছিল উৎসব, আনন্দ আর মিলনমেলা। বাবা, কাকা, মা ও আত্মীয়-স্বজন সবাই একত্র হতেন। তখন আমাদের বাড়িটা যেন উৎসবের আসরে পরিণত হতো। সেই দিনগুলো এখন শুধু স্মৃতিতে বেঁচে আছে। পূজার সময় আমি বারবার সেই মুহূর্তগুলো মনে করি আর বুকের ভেতর হাহাকার জমে ওঠে।”
অপু বিশ্বাস জানান, বর্তমানে তিনি নতুন কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তবে পূজার সময় সবকিছুর মাঝেও মন পড়ে থাকে হারানো আপনজনদের কাছে। তিনি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। কিছু নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কথা চলছে। ভালো কোনো খবর থাকলে অবশ্যই সবার সঙ্গে শেয়ার করব।”
অপু বিশ্বাসের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৬ সালে শাকিব খানের বিপরীতে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘কোটি টাকার কাবিন’ দিয়ে। এরপর শাকিব-অপু জুটি দীর্ঘদিন ঢালিউড শাসন করেছে এবং প্রায় ৭২টি সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন। তার অধিকাংশ ছবিই বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে।
অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অপু প্রযোজক হিসেবেও নাম লিখিয়েছেন। ‘লাল শাড়ি’ তার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা। তাঁতপল্লির প্রেক্ষাপটে প্রেম, ভালোবাসা ও স্থানীয় রাজনীতির গল্প নিয়ে নির্মিত এ ছবির জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে তিনি ৬৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন।
আজকের এই নায়িকা, যিনি পর্দায় লক্ষ মানুষের আনন্দের কারণ, পূজার মতো উৎসবে বারবার নিজের ব্যক্তিগত শূন্যতার মুখোমুখি হয়ে ভেঙে পড়েন। তার ভাষায়, “মা-বাবার অভাব কোনোদিন পূরণ হবে না। তারা থাকলে পূজার আনন্দ ভিন্ন রকম হতো। এখন প্রতিটি আনন্দই অসম্পূর্ণ মনে হয়।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ