
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেলেও, অর্থনৈতিক চাপ ও সমর্থনের অভাবে ধ্বংসের মুখে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলায় এক লাখ তাঁতের মধ্যে ৭৫ হাজার বন্ধ হয়ে গেছে, বাকিগুলোরও অবস্থা দুশ্চিন্তাজনক। শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ড স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
টাঙ্গাইলের তাঁত পল্লিতে এক সময় ছিল যন্ত্রপাতির খট খট শব্দে প্রাণ, এখন সেখানে নীরবতা। করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যবসা স্থগিত হয়ে ৭৫ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়েছিল। পরে অনেকে ব্যাংক ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করলেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
তাঁত মালিকরা অভিযোগ করেছেন, “উৎপাদন খরচ দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু বাজারে শাড়ির কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চলার মতো অবস্থা নেই।” অনেক তাঁত শ্রমিকই মজুরি ঠিকমতো পাচ্ছেন না, যা পরিবারের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। কিছু শ্রমিক জানিয়েছেন, “মজুরি এতটাই কম যে সংসার চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।”
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. আয়েশা রহমান মন্তব্য করেছেন, “টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প শুধুমাত্র ব্যবসা নয়, এটি দেশের সংস্কৃতির অঙ্গ। যদি সরকার দ্রুত সমন্বিত অর্থায়ন ও ঋণ প্রকল্প না চালু করে, এই শিল্প দীর্ঘমেয়াদে বিলীন হয়ে যেতে পারে।”
শিল্প বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ সুলতান বলেন, “জিআই শাড়ির আন্তর্জাতিক চাহিদা থাকলেও স্থানীয় উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক মজুরি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। নীতি নির্ধারকদের উচিত ঋণ সহায়তা ও বাজার মূল্য স্থিতিশীলকরণ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”
টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার মো. জাহিদুর রহমান বলেন, “শিল্প রক্ষার জন্য বোর্ড থেকে ঋণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, খুব শিগগিরই এটি কার্যকর হবে।”
বর্তমানে জেলায় পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যরত রয়েছে ১৫ হাজারেরও কম তাঁত, যা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের অস্তিত্বের জন্য সংকেত দিচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ