
সংগৃহীত ছবি
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে এদিন আদালতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর পাপিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী, সাঈদ আহমেদ রাজা ও শাহ মনজুরুল হক।
গত মাসের ১ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দিয়ে পাপিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন। এ জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। গত ২ নভেম্বর জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
২০২০ সালের ৪ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তাদের দখলে রাখায় চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। এরপরই বিচার শুরু হয়।
পাপিয়ার বিরুদ্ধে সাজা-
২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর অস্ত্র মামলায় দুটি পৃথক ধারায় বহুল আলোচিত নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে ২৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকার এক নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অস্ত্র মামলায় আলোচিত এই দম্পতির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হলো। দুটি ধারার মধ্যে একটিতে ২০ বছর, অন্যটিতে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এই দম্পতিকে। তবে দুটি সাজা একত্রে চলবে। ফলে তাদের ২০ বছরই সাজা ভোগ করতে হবে।
২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বামী মফিজুর রহমান সুমনসহ পাপিয়া ও তাদের দুই সহযোগীকে আটক করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ১১ হাজার ৪৮১ ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কিছু মুদ্রা ও দুটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।
পরে পাপিয়ার ফার্মগেটের ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
অভিযান চালানো হয় পাপিয়ার নরসিংদীর বাড়িতেও। র্যারের পক্ষ থেকে ওইসময় বলা হয়, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে কোটি টাকার ওপরে বিল দিতেন। গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এর অধীনে একটি মামলা করা হয়। আর মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। এরপর দুদকও পাপিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামে। একই বছর ২০২০ সালের ৪ আগস্ট দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে তাদের দুইজনের নামে মামলাটি করেন। এ মামলায় ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আদালত।
এর মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় ২০২০ সালে ২৯ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দেয় র্যাব। ২৩ আগস্ট ঢাকা মহানগরের এক নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক পাপিয়া ও সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।