
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর এবার দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সরব হলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। রোববার (১১ মে) সকালে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান। একইসঙ্গে তিনি দেশজুড়ে ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
নাহিদ ইসলামের বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, "বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট ইতিহাসের যেসব কারিগর বিভিন্ন সময়ে হত্যা, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, জুলুম, দমন-পীড়ন চালিয়েছে, বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে যারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছে, তাদের একে একে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।" তিনি বলেন, “শুধু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেই হবে না, দলটির রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধ্বংস করতে হলে নিবন্ধনও বাতিল করতে হবে—এটা জরুরি।”
নাহিদ ইসলাম তার বিবৃতিতে চলমান পরিস্থিতিতে সরকার ও আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকেও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, "বিপ্লবী ছাত্র-জনতা প্রমাণ করেছে, এ দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণ কখনোই ফ্যাসিস্ট শাসন দীর্ঘদিন সহ্য করবে না। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় গণআন্দোলন চলছে। এসব সংগ্রামই সরকারকে সাহস জুগিয়েছে ইতিহাসের পক্ষে দাঁড়াতে।"
তিনি আরও বলেন, “আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই যে তারা দেরিতে হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ করা হবে না। বিশেষ করে জুলাই ঘোষণাপত্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রশ্নে আমাদের সংগ্রাম চলতেই থাকবে।”
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এটি দ্রুত বাতিল করতে হবে। কারণ কোনো নিষিদ্ধ দল কোনোভাবেই নির্বাচনের অংশ হতে পারে না। এ ধরনের দলকে বহাল রাখা নির্বাচন ব্যবস্থাকে উপহাসে পরিণত করবে।"
তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিচয় বাতিল না করলে, এই দল তাদের অঙ্গসংগঠন, অর্থনৈতিক শাখা, মিডিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আবারও সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে পারে।”
এর আগে শুক্রবার (৯ মে) শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির মধ্যেই ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, “শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দলমত নির্বিশেষে, দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে সারা বাংলাদেশ আবারও ঢাকামুখী হবে।"
তিনি বলেন, “ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। যদি নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ বাস্তবায়নের দিকে যথাযথ অগ্রগতি না দেখায়, তাহলে পরবর্তী কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে লাখো মানুষ ঢাকায় জড়ো হয়ে চূড়ান্ত অবস্থান নেবে।”
বিবৃতির শেষ অংশে এসে নাহিদ ইসলাম তার ভাষায় “মুজিববাদী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে অভিহিত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতাপন্থি’ সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এই সংগঠন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, মানবতা ও ইসলামবিরোধী। এই দলকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পুনরুদ্ধার হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে আমরা আবারও ঘোষণা করছি—জুলাই প্ল্যাটফর্ম, গণবিচার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলবে। এ বিষয়ে কোনো আপস নেই।”
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, যেখানে সাবেক শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে এনসিপি’র মতো নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম যখন নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি পদক্ষেপ দাবি করে, তখন সেটি রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর একধরনের নতুন চাপ সৃষ্টি করে।
একই সঙ্গে এনসিপি’র বক্তব্য থেকে এটি পরিষ্কার যে দলটি শুধু আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থার মধ্য দিয়েও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্ব মুছে দিতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় তারা নিজেকে নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ