
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধাবস্থার মতো এক টালমাটাল সময় পার করছে ভারত ও পাকিস্তান। কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে সীমান্তে দু’দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চলছে। যুদ্ধাবস্থা ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে। এর মাঝেই ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি।
গত ৯ মে (শুক্রবার) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে আফ্রিদি ভারতের গণমাধ্যমকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “ভারতীয় গণমাধ্যম সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের বদলে এখন প্যারোডিতে পরিণত হয়েছে। তাদের নিউজরুম কার্টুন নেটওয়ার্কে রূপ নিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্রিকেট একসময় ভারত-পাকিস্তানকে এক করেছে। আজ সেটিই অস্ত্রের ক্রসফায়ারে। খেলা আমাদের কাছে শুধু বিনোদনের বিষয় নয়, এটা বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য ও শান্তির প্রতীক। অথচ এখন সেই খেলাই হামলার টার্গেট হচ্ছে।”
আফ্রিদির মন্তব্যের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় মূলত রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিতব্য একটি পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ম্যাচকে কেন্দ্র করে। গত ৭ মে রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামে করাচি কিংস বনাম পেশোয়ার জালমির ম্যাচ শুরু হওয়ার মাত্র ৬ ঘণ্টা আগে ওই এলাকায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। এতে স্টেডিয়ামের পাশের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিরাপত্তা বিবেচনায় শেষ মুহূর্তে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ম্যাচটি বাতিল করে।
পরদিন পিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের আসরে আর কোনো পিএসএল ম্যাচ পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে না। বাকি আটটি ম্যাচ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) স্থানান্তর করা হবে। তবে শুক্রবার রাতে পিসিবি আরও এক ধাপ এগিয়ে এক বিবৃতিতে পুরো পিএসএলই স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই শহীদ আফ্রিদি তার পোস্টে লেখেন, “খেলাধুলা ধর্ম, বর্ণ কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে। অথচ আজ সেই খেলাই হামলার মুখোমুখি। ভারতীয় ড্রোন রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের পাশে হামলা চালিয়েছে। এর মাধ্যমে খেলাধুলার মাধ্যমে গড়ে ওঠা একাত্মতা ধ্বংস হচ্ছে।”
চলমান এই উত্তেজনার সূচনা হয় গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায়। এতে ভারতের ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। ৬ মে ভারত আজাদ কাশ্মীর অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ৭ মে পাকিস্তান থেকে একাধিক ড্রোন ভারতে ঢুকে হামলা চালায় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ।
এরই মধ্যে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের ধর্মশালায় আইপিএলের একটি ম্যাচ (পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস) চলাকালীন নিরাপত্তা হুমকির কারণে খেলা মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়। ওই সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের পশ্চিম সীমান্তে অভিযান চালিয়েছে বলেও দাবি করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, এই ধরনের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি ক্রিকেটারদের দ্রুত নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শহীদ আফ্রিদি দাবি করেছেন, ভারতের গণমাধ্যম উত্তেজনা প্রশমনে নয়, বরং উসকানিমূলক ও কল্পনানির্ভর সংবাদ পরিবেশন করে উল্টো আগুনে ঘি ঢালছে।
“তাদের রিপোর্টিং মানসিক ভারসাম্যহীনদের মতো। মনে হয় না তারা কোনো নীতিমালার অধীন সাংবাদিকতা করছে। যেভাবে তারা নিউজ প্যাকেজ বানাচ্ছে, তাতে মনে হয় তারা কোনো বিনোদনমূলক টক শো বানাচ্ছে। এটাই গণমাধ্যমের দায়িত্ব নয়,”—ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় এমন মন্তব্যও করেছেন আফ্রিদি।
আফ্রিদি বলেন, “ড্রোন দিয়ে স্টেডিয়ামের কাছে হামলা চালানো খেলার ওপর সরাসরি আঘাত। এমন আক্রমণের মাধ্যমে শুধু এক একটি খেলাই নয়, একটি জাতির আশা-ভরসা, তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নও চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে।”
তিনি আহ্বান জানান, “আসুন আমরা স্ট্যাম্প আর বলের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিই। খেলার মাঠে ফিরুক বন্ধুত্ব, ফিরুক মানবতা।”
দুই দেশের মধ্যে যখন যুদ্ধের দামামা, তখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেন সেই উত্তেজনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই সেনসেশনাল হেডলাইন ও অবান্তর বিশ্লেষণ প্রচার করায় হতাশ পাকিস্তানের ক্রীড়ামহল।
এই প্রেক্ষাপটে শহীদ আফ্রিদির বক্তব্য শুধু ক্রিকেট নিয়ে উদ্বেগ নয়, বরং পুরো উপমহাদেশে খেলাধুলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ