
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিবেদন অনুযায়ী, হৃদরোগ পৃথিবীজুড়ে মৃত্যুপুরী এক মহামারি হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রতি বছর আনুমানিক ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই পরিসংখ্যানের মধ্যে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যু অন্যতম প্রধান কারণ। সেই কারণে, সুস্থ জীবনযাপন করতে গেলে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে এমন কিছু খাবারের ক্ষেত্রে যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আসুন, জানি এমন কিছু খাবারের কথা, যেগুলো আমাদের হৃদপিণ্ডের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
১. প্রক্রিয়াজাত মাংস
প্রক্রিয়াজাত মাংসের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম এবং প্রিজারভেটিভ থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়ক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, যদি কেউ প্রতিদিন ৫০ গ্রাম বা তার বেশি প্রক্রিয়াজাত মাংস খেয়ে থাকে, তবে তার করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৮% পর্যন্ত বেড়ে যায়। প্রক্রিয়াজাত মাংসের মধ্যে সালামী, সসেজ, হ্যাম এবং বেকন প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, এই ধরনের খাবারগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. ভাজা খাবার
ফাস্ট ফুড ও ভাজা খাবার, যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পিৎজা, ফাস্ট ফুড, চিপস ইত্যাদি, নিয়মিত খেলে হৃদপিণ্ডের ধমনীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই ধরনের খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা ধমনীতে প্লাক জমা করিয়ে দেয়। এই প্লাক ধমনীকে সংকুচিত করতে পারে, ফলে রক্ত প্রবাহের সমস্যা দেখা দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, এই ধরনের খাবার শরীরের পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়, যা উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। তাই, সুস্থ থাকার জন্য ভাজা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন।
৩. বেশি মিষ্টি খাবার
কোল্ড ড্রিঙ্কস, ক্যান্ডি, এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার সেবন অত্যধিক পরিমাণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ধরনের খাবারগুলো শরীরে অতিরিক্ত চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিনিযুক্ত খাবারগুলি শরীরের ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, মিষ্টির চেয়ে তাজা ফলমূল এবং অন্য স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস গ্রহণ করা উচিত।
৪. লবণ বেশি থাকা খাবার
চিপস, স্ন্যাকস, টিনজাত খাবারে উচ্চ পরিমাণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে হৃৎপিণ্ডের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। লবণ অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে রক্তের পরিমাণ এবং চাপ বাড়তে থাকে। এই কারণে, খাবারে লবণ কমিয়ে রাখা উচিত এবং প্রতিদিন ২ গ্রাম লবণের চেয়ে বেশি গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৫. লাল মাংস
গরুর মাংস বা খাসির মাংস অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাল মাংসের বেশি পরিমাণে সেবন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এটি রক্তে LDL (লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা ধমনীতে জমে গিয়ে ব্লকেজ তৈরি করতে পারে এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
হৃদরোগ রোধে করণীয় পদক্ষেপ
আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কিছু সঠিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি:
১. প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন: তাজা ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খাওয়া আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো থেকে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
২. অতিরিক্ত তেল ও লবণ এড়িয়ে চলুন: তেল, মাখন ও লবণ খুব বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ধূমপান এবং অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন হৃদরোগের অন্যতম কারণ। এই দুইটি অভ্যাস থেকে যত দ্রুত সম্ভব বিরত থাকুন।
৫. রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন: উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল খুব দ্রুত হৃদরোগের কারণ হতে পারে। তাই এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই পদক্ষেপগুলি মেনে চললে আপনি দীর্ঘকাল সুস্থ থাকতে পারবেন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ