
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর শাহবাগ মোড় আজ শনিবার (১০ মে) বিকেল থেকে পরিণত হয়েছে একটি রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সেখানে শুরু হয়েছে এক ব্যাপক গণজমায়েত, যেখানে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ছাত্রসংগঠনের সদস্য এবং সাধারণ জনগণ। ক্রমেই বাড়ছে জনসমাগম, মুখর হয়ে উঠেছে রাজপথ নানা স্লোগানে।
দুপুর ৩টার পর থেকেই শাহবাগ মোড়ে একে একে জড়ো হতে থাকেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবং জুলাই অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা একাধিক প্ল্যাটফর্মের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীরা দলে দলে মিছিল করে জড়ো হন শাহবাগ মোড়ে। সাধারণ ছাত্র-জনতাকেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে, যাঁরা কেউ পোস্টার হাতে, কেউ গলায় ফেস্টুন ঝুলিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
সরেজমিনে শাহবাগ মোড় ঘুরে দেখা গেছে, স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে”, “লীগ ধর, জেলে ভর”, “দফা এক, দাবি এক—লীগ নট কাম ব্যাক”, “ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ”, “এক দুই তিন চার, চুপ্পু তুই গদি ছাড়”, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল কর”, “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”—এমন নানা স্লোগানে বিক্ষোভকারীরা তাদের ক্ষোভ ও রাজনৈতিক বার্তা প্রকাশ করছেন।
গণজমায়েতে রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের একাধিক নেতা বক্তব্য রাখেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “আজ এক মাইক, এক লক্ষ্য—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের লড়াই। কেউ ভিন্ন মাইক ব্যবহার করবেন না, আমরা সবাই একসাথে থাকব।”
অপরদিকে, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “এটা কোনো সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটা মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দেশের জনগণ আজ আর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।”
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং কয়েকটি ইসলামী ছাত্রসংগঠনের নেতারাও গণজমায়েতে বক্তব্য দেন। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিকে যৌক্তিক এবং গণদাবি হিসেবে অভিহিত করেন।
এতদিন ধরে চলা এই ধারাবাহিক আন্দোলনের পেছনে রয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি। এনসিপির ডাকে সেই দিন রাতভর এবং শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে ছিল অবস্থান। সেখানেও অংশ নিয়েছিল ইসলামী ছাত্রশিবির, আপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সদস্যরা। পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মিন্টো রোড ফোয়ারার সামনে মঞ্চ করে চলেছে অবস্থান সমাবেশ, যেখানে একের পর এক বক্তব্য দেন বিরোধী নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব গণজমায়েত ও সমাবেশের মাধ্যমে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, যেখানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব বিরোধী শক্তি একত্র হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামীমনা ছাত্র-তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রাজনৈতিক মহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এদিকে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে শাহবাগ মোড় ও আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের সহিংসতা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এই গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়ানোর শঙ্কা করছেন অনেকে। বিশেষ করে যখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের গণজমায়েত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি যত দিন যাচ্ছে, ততই সংঘবদ্ধ আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোতে শাহবাগ কেন্দ্রিক আন্দোলন কতটা বিস্তার লাভ করবে, তা নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের ওপর। তবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, রাজধানীর রাজপথে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে, যা নতুন রাজনৈতিক মোড় নিতে পারে যে কোনো সময়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ