
ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোল সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে।
শনিবার (১০ মে) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতি পরিদর্শনের সময় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। বিমানবন্দরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে আমরা আন্তর্জাতিক আইন মেনে অগ্রসর হচ্ছি। ইন্টারপোলের সহায়তায় প্রয়োজনীয় তথ্য ও আইনি দলিলপত্র পাঠানো হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হলেও আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আইন ও ন্যায়ের পথে থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তার অনুপস্থিতিতে মামলা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় রেড নোটিশ বা অন্যান্য আইনি পন্থা ব্যবহার করে তার প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি দেখতে চেয়েছি, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় আগের তুলনায় কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। এখন অনেকটাই উন্নত হয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। যাত্রীদের সেবার মানও উন্নত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন মেশিন, বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন, ই-পাসপোর্ট যাচাইকরণসহ যেসব আধুনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তব কার্যকারিতা খতিয়ে দেখা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করাই ছিল এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর এবং সেই সফরের আগে কীভাবে তিনি নিরাপত্তা বলয় অতিক্রম করে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে দেশত্যাগ করলেন—তা খতিয়ে দেখতে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা বলয় ও সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। যদি সেই প্রক্রিয়ায় কোনো গাফিলতি বা অবহেলা থেকে থাকে, তাহলে তা খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগ ঠেকাতে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-এর পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে এবং প্রয়োজনে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করি। সবাইকে মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। তবে কোনো কর্মসূচি পালন করার সময় জনভোগান্তির দিকটি মাথায় রাখা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “দাবি আদায়ের অনেক পথ রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনের আওতায় থেকে কর্মসূচি পালন করতে হবে। জনগণের জানমাল বা চলাচলের পথে কোনো বিঘ্ন না ঘটিয়ে আন্দোলন করতে হবে। সরকার কারও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না, তবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা প্রয়োজন, তা করবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে বর্তমান সরকার দেশীয় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন হোক বা সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ সফর—প্রতিটি বিষয়েই সরকার তদন্ত, প্রক্রিয়া এবং আইনের পথেই এগোচ্ছে। একইসঙ্গে গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং জনস্বার্থে শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথাও বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো ও শাসনব্যবস্থার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ