
ছবি: সংগৃহীত
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাব রাজ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলমান সংঘাতের মধ্যে নতুন করে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে অঞ্চলটি। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনা চরমে ওঠার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার রাতে অমৃতসর ও জম্মু শহরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা দুই পারমাণবু সামরিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধাবস্থার ইঙ্গিত বহন করছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিখদের পবিত্র শহর অমৃতসরের বিভিন্ন এলাকায় আচমকা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলে শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন। এর আগে তিন দিন ধরে সীমান্ত এলাকাগুলোর ওপর ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেলেও অমৃতসরের মতো শহরে সরাসরি বিস্ফোরণের ঘটনা এবারই প্রথম।
শুধু অমৃতসরই নয়, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলেও শুক্রবার রাতে ব্যাপক বিস্ফোরণ হয়। জম্মু শহরের আকাশে দেখা গেছে লাল শিখা ও বিস্ফোরিত 'প্রজেক্টাইল' বা বোমার টুকরার মতো বস্তু। রয়টার্সের একজন সাংবাদিক ও স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, জম্মু বিমানবন্দরের কাছাকাছি বিস্ফোরণ শুরু হলে পুরো এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ঘন কালো ধোঁয়া ও জ্বলন্ত বস্তু দেখা গেছে।
শুধু জম্মুই নয়, কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের কাছাকাছি বিমানবন্দর এলাকাতেও ১০টির মতো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। একইসঙ্গে গোটা কাশ্মীরজুড়ে আরও অন্তত ১২টি স্থানে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এসব বিস্ফোরণের উৎস স্পষ্ট না হলেও ধারণা করা হচ্ছে— ভারী কামান থেকে ছোঁড়া গোলা কিংবা ড্রোন হামলার ফলেই এসব ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের দিক থেকে আসা একাধিক ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এ ঘটনাকে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। শুক্রবার রাতে ভূপাতিত হওয়া ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ ও ভিডিও প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
অন্যদিকে পাকিস্তান এখনো এসব বিস্ফোরণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তারা বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকায় হামলার দায় অস্বীকার করেছিল। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই দাবি করা হয়েছে যে, ভারতীয় বাহিনী বিনা উসকানিতে সীমান্তবর্তী জনপদগুলোতে গোলাবর্ষণ করছে এবং যুদ্ধাবস্থা তৈরির চেষ্টা করছে।
এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তজুড়ে ব্যাপক সামরিক তৎপরতা চলছে। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং বিভিন্ন সীমান্ত চৌকিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত অবস্থায় থাকায় আশঙ্কা বাড়ছে— সামান্য একটি ঘটনা থেকেও বড় ধরনের যুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের বহু এলাকা এখন কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবাও বিভিন্ন এলাকায় সীমিত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এ ধরনের উচ্চমাত্রার সামরিক উত্তেজনা শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি ভয়াবহ বার্তা। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ এড়াতে মধ্যস্থতার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ