
ছবি: সংগৃহীত
রাজনীতিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগসহ সারা দেশে একযোগে গণজমায়েতের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার রাতেই রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
হাসনাত বলেন, "আমরা আন্দোলনের সূচনা করেছি ২৫ ঘণ্টা আগে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এখনো চলমান আছে। আমরা জানি না এর শেষ কোথায়। যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব।"
তিনি বলেন, “শনিবার বিকেল ৩টায় শাহবাগে গণজমায়েত হবে। পাশাপাশি জুলাই মাসে বাংলাদেশের যেসব পয়েন্টে আমরা আন্দোলন করেছিলাম, সেখানেও গণজমায়েত হবে। এটা একটি বাংলাদেশপন্থি বনাম ফ্যাসিবাদপন্থি লড়াই।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি ইতোমধ্যে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছে। তাদের প্রথম দাবি, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে তা নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করতে হবে।
শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে এনসিপির কর্মী-সমর্থকরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বসে পড়ে। মোড়ের চারপাশে আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে স্লোগান দেন তারা। সব স্লোগানের মূল বক্তব্য একটাই—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। শাহবাগ চত্বরে জাতীয় পতাকা, পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসব পোস্টারে লেখা ছিল—“এই মুহূর্তে ব্যান চাই, আওয়ামী লীগের ব্যান চাই”, “আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না”, “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে”, “জুলাইয়ের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার” প্রভৃতি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামপন্থি সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ নানা দলের অনুসারী ও সাধারণ জনগণ। এমনকি বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানী ও তার অনুসারীদেরও সেখানে দেখা গেছে।
শুক্রবার রাত ৯টায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, "আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগেই থাকব। কেবল শাহবাগ নয়, প্রয়োজনে সারা বাংলা ব্লক করব। ইন্টেরিম সরকার যদি বিলম্ব করে, তবে এর দায় তাদের নিতে হবে।"
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত মাহমুদুর রহমান খান সোহেলের স্ত্রী মরিয়ম খানম বলেন, "আমার স্বামী জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন আওয়ামী লীগ কেমন একটি দানবীয় শক্তি। অথচ আজও তাদের নিষিদ্ধ করা হয়নি। কেন আমাদের আবার মাঠে নামতে হচ্ছে?"
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, "এটা কোনো দলীয় আন্দোলন নয়, জনগণের দাবি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে—এই এক দফা দাবি নিয়ে আমরা মাঠে আছি।"
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, "বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলতে দেওয়া যায় না। যারা কোরআন-সুন্নাহ, ইসলাম, মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা সময়ের দাবি।"
এর আগে বিকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের সড়কে এনসিপির গণসমাবেশ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আনুষ্ঠানিকভাবে শনিবারের গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন এবং রাতভর অবস্থান অব্যাহত রাখেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ