
ছবি: সংগৃহীত
রাজনীতিতে চলমান অনিশ্চয়তার আবহে সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে মন্তব্য করেছেন, তা ঘিরে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ীতে বার্ক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময়” অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড জনমনে প্রশ্ন তৈরি করছে, তারা আদৌ দায়িত্ব পালন করছে কি না।
তিনি সরাসরিই বলেন, “একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন, অথচ সরকার বলে তারা নাকি কিছুই জানে না! এটা কীভাবে সম্ভব? কীভাবে এমন একটা ঘটনা সরকার অজানা থাকতে পারে?” এই বক্তব্যের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
তারেক রহমানের মতে, এ ধরনের ‘অবাক করা ঘটনা’ ইঙ্গিত দেয় যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো সচেতনভাবেই কিছু ইস্যু তৈরি করছে, যার লক্ষ্য ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং আওয়ামী লীগকে পুনরায় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ‘পুনর্বাসন’ করার পথ তৈরি করা। তার ভাষায়, “ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য ধ্বংস করার জন্যই কিছু ইস্যু তৈরি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, এবং তার সুযোগে আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে শক্তি জোগানোর কৌশল নিচ্ছে এই সরকার।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, আর সেই সময়ের মধ্যেই পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগে সহায়তা করা হচ্ছে। মানুষ জানতে চায়—এটাই কী অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন?”
অনুষ্ঠানে তিনি ২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনের প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, “তৎকালীন র্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সুমনকে তুলে নিয়ে যায়, যার হদিস আজও মেলেনি। সেই গুমের ঘটনা আজও আমাদের জাতিগত যন্ত্রণার প্রতীক হয়ে আছে।”
এ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, “যে ব্যক্তি গত এক দশক ধরে নিখোঁজ, তার বোনের বাসায় গতকাল পুলিশ অভিযান চালিয়েছে—এই ঘটনায় শুধু আমরা নয়, জনগণও স্তম্ভিত। প্রশাসন বলছে তারা কিছুই জানে না, অথচ নিজেরাই অভিযান চালায়! তাহলে কি সত্যিই প্রশাসন অন্ধ? নাকি এও একটি পরিকল্পিত হয়রানির অংশ?”
তিনি বলেন, “এই দুই ঘটনার মাঝে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে—একদিকে দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা একজন গুম হওয়া নেতার পরিবারকে হয়রানি, অন্যদিকে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির নীরব প্রস্থানের খবর অন্তর্বর্তী সরকারের অজানা থাকা—এসব কেবল ঘটনাবহুল কাকতাল নয়, বরং এর পেছনে গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে।”
তারেক রহমান দাবি করেন, “এই সব ঘটনায় একটি আশঙ্কাজনক প্রবণতা স্পষ্ট—ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের সহযোগীদের জন্য মাটি প্রস্তুত করা হচ্ছে আবার, আর মাঠের রাজনীতিতে যারা প্রতিরোধ গড়ছে, তাদের বিভ্রান্ত ও কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, আব্দুস সালাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতৃত্বের পক্ষে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এনডি ক্রুজ ও খ্রিস্টান ফোরামের মহাসচিব অনিল লিও কস্তা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জন গমেজ সভাপতিত্ব করেন। বিপুল সংখ্যক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ছিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে ঈস্টার উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়, তবে পরিণত হয় এক রাজনৈতিক বক্তৃতার মঞ্চে, যেখানে বর্তমান সরকারের ভূমিকা, গুম-খুন, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অস্পষ্টতার ওপর ঘনঘন প্রশ্ন উঠতে থাকে।
এই প্রসঙ্গে অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, তারেক রহমানের বক্তব্যগুলো কেবল বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে নয়, বরং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহ ও প্রশ্ন তৈরি করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ