
ছবি: সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উদ্ভূত যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে চলতি আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ভারতের অভ্যন্তরে একাধিক ড্রোন হামলা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করায় দেশজুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্বাভাবিকভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এরই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় অনুষ্ঠিতব্য আইপিএলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ—পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যকার খেলা—মাঝপথে স্থগিত করে দিতে হয়, যা আইপিএল ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া বিদেশি ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী দৈনিক দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্রিকেটার ও তাদের এজেন্টরা জানিয়েছেন—অনেক অজি খেলোয়াড় এখনই ভারত ত্যাগ করে নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকি খেলার মাঝপথেই দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
বর্তমানে আইপিএলে খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, ভয়ঙ্কর পেসার মিচেল স্টার্ক, অভিজ্ঞ জশ হ্যাজেলউড এবং আগ্রাসী ব্যাটার ট্র্যাভিস হেডের মতো তারকারা। এছাড়া, দলীয় কোচিং স্টাফেও রয়েছেন কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান রিকি পন্টিং এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ব্র্যাড হ্যাডিন। এই তারকারা এমন সময়ে ভারতে অবস্থান করছেন, যখন সীমান্ত পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আইপিএলের শীর্ষ কর্মকর্তা অরুণ ধুমল এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “আমরা খুবই সংবেদনশীল সময় অতিক্রম করছি। সরকার থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি, তবে প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
পাঞ্জাব কিংসের প্রধান কোচ রিকি পন্টিং আরও বলেন, “গত কয়েক দিনে কিছু এমন ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো আমাদের সকলকে চিন্তায় ফেলেছে। আমরা জানি না, পরবর্তী ম্যাচ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের মূল মনোযোগ খেলার দিকে রাখতে চাইলেও, মাঠের বাইরের অস্থিরতা খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করছে।”
এদিকে, পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) বাধ্য হয়ে তাদের ঘরোয়া লিগ—পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)—সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সম্ভাবনার কথা এখন শোনা যাচ্ছে আইপিএল নিয়েও। কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা এবং কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতের রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি যদি আরো অবনতি ঘটে, তাহলে আইপিএল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এদিকে শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। তারা মনে করছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতির ঘনঘটা যদি বাস্তব রূপ পায়, তাহলে খেলোয়াড়রা বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে পারেন।
বিশেষ করে ধর্মশালায় বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি আচমকা স্থগিত হওয়ায় খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিসিসিআই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিকল্প ভেন্যু ঘোষণা না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, একাধিক ম্যাচ হয়তো ভেন্যু পরিবর্তনসহ খালি স্টেডিয়ামে আয়োজনের চিন্তা করা হচ্ছে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালে কোভিডের কারণে আইপিএল মাঝপথে স্থগিত করে বিদেশে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল। এবারও সেই রকম একটি সঙ্কট তৈরি হচ্ছে, তবে এটি আরও গভীর, কারণ এখানে শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, সরাসরি নিরাপত্তা হুমকির বিষয় জড়িত।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বিদেশি খেলোয়াড়েরা ইতোমধ্যেই আইপিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন এবং বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি, দেশে ফেরার পথও খোলা রাখতে অনুরোধ করেছেন। বিসিসিআই বলছে, তারা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই—আইপিএল কি চলতি আসর শেষ করতে পারবে, না কি পরিস্থিতির চাপে আবারও বিদেশে সরিয়ে নিতে হবে বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ক্রিকেট লিগটিকে?
বাংলাবার্তা/এমএইচ