
ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাশনের রাজত্বে এক ঐন্দ্রজালিক রাত, মেট গালা ২০২৫ আবারও রঙ ছড়াল তার গ্ল্যামার, গ্লিটজ আর সেলিব্রিটিদের চোখধাঁধানো উপস্থিতিতে। ৬ মে নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে অনুষ্ঠিত এই ফ্যাশন জগতের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন ইভেন্টে প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বের তারকারা ঝলমলে পোশাকে হাজির হন রেড কার্পেটে। তবে মেট গালার দৃষ্টিনন্দনতা আর তারকাবহুল উপস্থিতির পেছনে লুকিয়ে থাকে এমন এক কঠোর নিয়মাবলি, যেগুলো প্রতিটি অতিথিকে নিখুঁতভাবে মেনে চলতে হয়—এমনকি বিশ্বজোড়া খ্যাতিমান তারকারাও এর ব্যতিক্রম নন।
এই ইভেন্টের আয়োজক এবং নিয়মের মূল রূপকার বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ-এর প্রধান সম্পাদক আনা উইন্টুর ও তার ঘনিষ্ঠ ইভেন্ট পরিকল্পক দল। মেট গালায় আমন্ত্রণ পাওয়া যেমন গৌরবের, তেমনি এই নিয়মগুলো না মানলে তা হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য দুঃস্বপ্ন।
প্রথম ও সবচেয়ে কড়াকড়িভাবে মানা হয় একটি নিয়ম—ইভেন্ট চলাকালীন সময় অংশগ্রহণকারী কারো পক্ষে ফোন ব্যবহার বা সামাজিক মাধ্যমে ছবি কিংবা ভিডিও পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অতিথিদের বলা হয় ফোন এক পাশে রেখে শুধুই অনুষ্ঠানের রঙে মেতে ওঠার জন্য। নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি আয়োজনের ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা বজায় রাখার জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা। এই নিয়ম ভাঙলে অতিথিকে ভবিষ্যতের ইভেন্টে নিষিদ্ধ করার নজিরও রয়েছে।
ডিনার টেবিলেও রয়েছে নজিরবিহীন শৃঙ্খলা। গালার ডিনারে পেঁয়াজ, রসুন ও পার্সলে যুক্ত কোনো খাবার রাখা হয় না। কারণ হিসেবে আয়োজকরা জানিয়েছেন—এগুলো খাওয়ার পর মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে এবং দাঁতের মাঝে আটকে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। এছাড়া পোশাকে দাগ লাগতে পারে এমন যেকোনো ধরনের খাবার, যেমন ব্রুশেটা বা অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবারও নিষিদ্ধ। গ্ল্যামার যেন কোনো দাগে ঢেকে না যায়, সেটিই মূল লক্ষ্য।
মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানকার শিল্পকর্ম ও প্রদর্শনীর ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অতীতে কিছু সেলিব্রিটি গোপনে ধূমপান করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, ফলে এখন এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই নিয়ম লঙ্ঘনের শাস্তি হতে পারে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
মেট গালার প্রতিটি ইভেন্টের একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে, যার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় সেলিব্রিটিদের পোশাক পরিকল্পনা। ২০২৫ সালের থিম ছিল: ‘সুপারফাইন: টেইলরিং ব্ল্যাক স্টাইল’, আর ড্রেস কোড নির্ধারণ করা হয় ‘টেইলর্ড ফর ইউ’। প্রতিটি অতিথির পোশাক শুধুমাত্র থিম অনুযায়ী হতে হবে তা নয়—আনা উইন্টুরের অনুমোদনও আবশ্যক। থিম অমান্যকারীকে সরাসরি আমন্ত্রণ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
মেট গালায় কেউ নিজের পছন্দমতো পাশে বসতে পারে না। অতিথিরা তাদের প্রিয় সঙ্গী বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে বসতে পারলেও তা পরিকল্পনামাফিক হয় না। ভোগের ইভেন্ট পরিকল্পক দল ব্যক্তিগত সম্পর্ক, অতীতের দ্বন্দ্ব, বন্ধুত্ব এবং সামাজিক সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে বসার পরিকল্পনা সাজায়। উদ্দেশ্য হলো—নতুন সংযোগ সৃষ্টি, নতুন আলাপ-আলোচনার পরিবেশ গড়ে তোলা।
মেট গালায় অংশ নেওয়া কোনো টিকিট কেনার বিষয় নয়—এটি নিছকই আমন্ত্রণনির্ভর একটি ব্যক্তিগত আয়োজন। বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত, প্রভাবশালী এবং স্টাইলিশ তারকারাও যদি আনার সম্মতি না পান, তবে গালার লালগালিচায় পা রাখা তাদের জন্য স্বপ্নই থেকে যাবে।
এবারের মেট গালায় বলিউড থেকেও ছিলো উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। শাহরুখ খান, প্রিয়াংকা চোপড়া, কিয়ারা আদভানি ও দিলজিৎ দোসাঞ্জের রেড কার্পেট উপস্থিতি নজর কাড়ে সবার। তবে তারা সবাই মেনে চলেন উপরের প্রতিটি নিয়ম, যার মাধ্যমে বোঝা যায়—মেট গালার নিয়মের কাছে সব তারকাই সমান।
ফ্যাশনের এই বৈশ্বিক মিলনমেলা কেবল পোশাকের প্রদর্শনী নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়—সৃজনশীলতা, সংযম ও সৌন্দর্য কখনোই নিয়মবহির্ভূত হতে পারে না। গ্ল্যামারের আড়ালে মেট গালা যতটা আলোকিত, ততটাই নিয়ন্ত্রিত এক অভিজাত আয়োজন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ