
ছবি: সংগৃহীত
ভারতজুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরম সতর্কতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জম্মু ও পাঞ্জাবের সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার অভিযোগের পর শুক্রবার (৯ মে) দেশটির সরকার অভূতপূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, গুজরাট ও রাজস্থানের অন্তত ২৪টি বিমানবন্দর বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে।
এই সিদ্ধান্তের খবরটি প্রথমে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়—ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা ব্যুরো (BCAS) সব এয়ারলাইন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহুগুণে জোরদার করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি নজরদারি ও সেন্সিটিভ জোন হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
BCAS-এর পক্ষ থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সব বিমানবন্দরে এখন থেকে যাত্রীদের জন্য সেকেন্ডারি ল্যাডার পয়েন্ট চেকিং (SLPC) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ বিমানে ওঠার আগে ফাইনাল চেকিংয়ের সময় যাত্রীদের আরও এক ধাপে তল্লাশি ও পরিচয় যাচাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।
এছাড়াও, টার্মিনাল ভবনে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে করে কোনোভাবেই সন্দেহজনক ব্যক্তি বা বস্তু বিমানবন্দরে ঢুকতে না পারে।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও সমন্বয় আনতে ভারতীয় বিমানবাহিনী, সিআইএসএফ, এনএসজি এবং রাজ্য পুলিশের সঙ্গে একাধিক জরুরি বৈঠক চলছে বলেও জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যার দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলে—জম্মু, পাঠানকোট ও উধমপুরে অবস্থিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি এবং জম্মু বিমানবন্দরের ওপর পাকিস্তানের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মাধ্যমে হামলা চালানো হয়েছে।
তবে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, এসব হামলা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তা সত্ত্বেও দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়।
সাম্প্রতিক এই ঘটনার সূত্র ধরেই দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ এয়ার স্পেস ও বিমানবন্দরগুলোকে উচ্চমাত্রার সতর্কতার আওতায় নিয়ে আসে। দেশটির বিমানবাহিনী ও সিআইএসএফ সদস্যদের দিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় বাড়তি টহল চালানো হচ্ছে।
ভারতের এই অভিযোগকে "পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। তিনি বলেন, "পাকিস্তান যদি কখনো ভারতের ওপর হামলা করে, তাহলে তা গোপন থাকবে না, পুরো বিশ্ব সেটা জানবে। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা ঢাকতেই এসব অভিযোগ আনছে।"
তিনি আরও বলেন, "পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে চায়, তবে যদি কোনো আগ্রাসন হয়, তার যোগ্য জবাবও দিতে প্রস্তুত।"
এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বিমানযাত্রীদের মধ্যে। অন্তত ১৪টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও ৭টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, চণ্ডীগড় এবং আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের ওপরও আংশিক প্রভাব পড়েছে।
এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের টিকিট রিফান্ড ও পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে নতুন গাইডলাইন দিচ্ছে, তবে যাত্রীদের অভিযোগ, শেষ মুহূর্তে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ সফর, চিকিৎসা বা চাকরিজনিত কাজে তারা মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন।
ভারতের অভ্যন্তরে এই নিরাপত্তা সতর্কতার মাত্রা নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাবকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
কাশ্মীর সীমান্তে হামলার অভিযোগ এবং বিমানবন্দরগুলোতে জারি করা সর্বোচ্চ সতর্কতা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অনেকটাই অস্বস্তিকর করে তুলেছে। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ ধরনের সামরিক উত্তেজনা দীর্ঘমেয়াদে শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ