
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ধারাবাহিক বিক্ষোভ আজ শুক্রবার সকালেও অব্যাহত রয়েছে। রাত ১০টার পর থেকে শত শত এনসিপি নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হন এবং সারারাত ধরে নানা স্লোগান ও প্রতিবাদে মুখর রাখেন ওই এলাকা। সকাল পর্যন্ত কোনো বিরতি ছাড়াই কখনো টানা, কখনো বিরতি দিয়ে তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গভীর রাতেও যমুনার সামনের সড়কজুড়ে ছিলো এনসিপির জমায়েত। হাতে প্ল্যাকার্ড, গলায় মাইক আর মুখে গর্জে ওঠা স্লোগানে তারা দাবি জানাতে থাকেন— “ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগকে ব্যান করো”, “আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে” এবং “ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর।” এসব স্লোগানে মধ্যরাত থেকে যমুনা ও আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে।
রাত ১টার কিছু পরেই একটি মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা। নেতাকর্মীরা ব্যানার ও মাইক হাতে নিয়ে যমুনার সামনের মূল ফটকের এক পাশে অবস্থান নেন এবং সেখানেই রাতভর অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়।
রাত ২টার দিকে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণার পর আমরা আশাবাদী ছিলাম যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ছিল। কিন্তু নয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা সরকারকে বারবার এই বিষয়ে বলেছি— ভেতরে বলেছি, বাইরে বলেছি। কিন্তু আজ আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য হতে হয়েছে। এই বার্তা সরকারকে বুঝতে হবে, আর দেরি নয়।”
বিক্ষোভস্থলে রাতে দফায় দফায় ছোট ছোট বক্তব্য রাখেন এনসিপির অন্য নেতারাও। বক্তারা আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী রাজনৈতিক গোষ্ঠী’ হিসেবে অভিহিত করে দলটি নিষিদ্ধ না করলে দেশের গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন।
বিক্ষোভের সময় যমুনা চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। তবে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকায় পুলিশ হস্তক্ষেপ করেনি।
সকালে গিয়ে দেখা যায়, রাতভর জেগে থাকা শতাধিক বিক্ষোভকারী এখনও অবস্থান করছেন যমুনার সামনে। কেউ চা খাচ্ছেন, কেউ পত্রিকা পড়ছেন, আবার কেউ নতুন স্লোগান নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়।
এদিকে এনসিপির এই কর্মসূচি ইতোমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এটিকে বিরোধী রাজনীতির নতুন ধারার অংশ হিসেবে দেখছেন যেখানে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবি নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এনসিপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বিকেলেও সেখানে বিক্ষোভ চলবে এবং আগামীকাল (শনিবার) রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে একযোগে ব্যানারসহ পদযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির মতো নতুন গঠিত দলগুলোর চাপ ও আওয়ামী লীগবিরোধী জনমতকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় চাপে পড়েছে। অনেকের মতে, এই ধরনের বিক্ষোভ দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিক নির্দেশক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ