
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং হাইকমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়, বেসরকারি ও সামরিক পর্যায়ে এক মাসে অন্তত ২৩টি বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত মুখ হাসনাত আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একাধিক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ তুলে ধরেন এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসনের ওপর তীব্র সমালোচনা করেন।
হাসনাত বলেন, এই বৈঠকগুলো নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয় বরং এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তাঁর দাবি, এই বৈঠকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব আরও একধাপ এগিয়ে গেছে এবং তা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ভারতীয় সংস্থা ও কূটনীতিকরা সরাসরি দেশি প্রশাসনের সঙ্গে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হচ্ছেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “শুধু এই মাসেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং হাইকমিশন বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি এবং সামরিক পর্যায়ে অন্তত ২৩টি বৈঠক করেছে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, এই বৈঠকের একটি বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দেওয়া। তাঁর ভাষায়, “লিখে রাখেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। একটা পর্যায় গিয়ে বলা হবে, এক সময়ের জনসমর্থিত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা আমাদের কাজ নয়।”
তিনি আরো বলেন, “যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নাই, যার এজেন্ডায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নাই, তার সঙ্গে আমরা নাই।”
হাসনাত এক ফেসবুক পোস্টে সরাসরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, “তা ইন্টেরিম, এখন পর্যন্ত কী কী বিচার ও সংস্কার করেছেন?” তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের বিচার শুরু না করে সরকার বিভিন্ন উপায়ে সময়ক্ষেপণ করছে। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারিতে বসার কথা থাকলেও মে মাস এসে গেলেও তা শুরু হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরেকটি পোস্টে হাসনাত আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ অপরাধীদের একের পর এক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। শিরীন শারমিনকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মধ্যে বাসায় গিয়ে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়। খুনিকে দেশ ছাড়ার নিরাপদ সুযোগ দেওয়া হয়, পুলিশ আসামিকে ধরলেও আদালত জামিন দিয়ে দিচ্ছে।
তার ভাষায়, “যখন জনগণের সামনে মুখোশ উন্মোচিত হবে, তখন এসব সুবিধাভোগীদের আর মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’, যার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ অন্যতম। সরকার পতনের পরে এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই জন্ম নেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যার অন্যতম শীর্ষ পদে দায়িত্বে রয়েছেন হাসনাত।
ভারতের সঙ্গে ২৩টি বৈঠকের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। এনসিপিসহ সরকারবিরোধী জোটগুলো ভারতের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকগুলো যদি সত্য হয়, তবে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও স্বাধিকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
হাসনাত আব্দুল্লাহর এই অভিযোগ শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক ধারার জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিলেও দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। রাজনীতি, প্রশাসন ও বিদেশি প্রভাব—এই তিন শক্তির জটিল মেলবন্ধনের প্রেক্ষিতে সামনে কী ঘটবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
বাংলাবার্তা/এমএইচ