
ছবি: সংগৃহীত
ভারতে পালিয়ে গিয়েও শেখ হাসিনা ক্ষান্ত হননি। দেশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে তার নতুন কৌশল সবার সামনে এসেছে, যেখানে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে দলকে আবার মাঠে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, এই কৌশল এখন নেতাকর্মীদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকেই পালিয়ে গিয়েছেন।
শেখ হাসিনার পালানোর পর পরিস্থিতি
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা এবং তার দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতারা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এর আগে, ২০১৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে দলটির বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতারা, সাবেক এমপি ও মন্ত্রীও দেশে থেকে বিদেশে চলে যান। শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদেরও আগেই দেশ থেকে পার করে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন নানা ধরনের আলোচনা চলছে।
শেখ হাসিনার নিঃশব্দে দেশের বাইরে যাওয়ার পর, যারা বাংলাদেশে ছিলেন, তারা খুবই বিপদে পড়েছেন। দলের কিছু নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে, আবার কিছু নেতাকর্মী গা-ঢাকা দিয়েছেন। শীর্ষ নেতারা যখন নিরাপদ অবস্থায় বিদেশে বসে আছেন, তখন দলের সাধারণ কর্মীরা ভুল পদক্ষেপের শিকার হচ্ছেন।
ঝটিকা মিছিলের পিছনে উসকানি এবং নেতাকর্মীদের বিপদ
শেখ হাসিনার নতুন নির্দেশনায়, দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলের নামে সড়কগুলোতে নামানো হচ্ছে। এতে অনেক নেতাকর্মী আবেগপ্রবণ হয়ে মিছিল করতে বেরিয়ে আসছেন। তবে, এই কর্মকাণ্ডে তাদের জীবনে নতুন বিপদ আসছে। গত কয়েক দিনে, বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ায়, তাদের অনেকেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনার নতুন কৌশলে বিপদে পড়েছে দলের নেতাকর্মীরা। এই পরিস্থিতি কিছু নেতা হতাশার মধ্যে পড়েছেন, যাদের মনে ছিল যে তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরুত্থান ঘটাতে পারবেন।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, শেখ হাসিনার কৌশল দলের জন্য বিপদজনক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থার আরও অবনতি ঘটাতে পারে। মাসুদ কামাল, একজন সিনিয়র সাংবাদিক, মন্তব্য করেছেন, “যারা পালিয়ে গেছেন, তারা জানেন তারা অপরাধ করেছেন, এবং সেই অপরাধের বিচার হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি দেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থান, যেখানে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব নিরাপদে বিদেশে বসে রাজনীতির কৌশল নির্ধারণ করছে এবং সাধারণ কর্মীরা নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এই ধরনের পরিস্থিতি দেশ এবং দলের জন্য মোটেও ভালো কিছু বয়ে আনবে না।”**
একই সুরে ডা. জাহেদ-উর রহমান, একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বলেন, “বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করার মাধ্যমে দলের বাইরে থাকা নেতারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সাধারণ নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে ফেলছেন।” তিনি আরো বলেন, “অস্থির পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীরা আরও বিপদে পড়ছেন, বিশেষ করে যারা কোনও অপরাধে জড়িত ছিলেন না।”
সাম্প্রতিক ফোনালাপ ও বিতর্ক
গত বছর শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন এবং দেশে ফিরে আসার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, "আমি খুব কাছাকাছি আছি, দেশে ফিরে যাব খুব শীঘ্রই।" এই ফোনালাপটির পর থেকেই দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শোনা গেছে, বেশ কিছু নেতাকর্মী তাকে পুনরায় নেতৃত্ব দিতে এবং রাজনীতিতে ফিরতে একটি সুস্পষ্ট পথ দেখতে চাইছেন।
নেতাকর্মীদের ক্ষোভ এবং বিরোধিতা
শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যখন নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়, তখন অবশ্যই তার নেতাকর্মীরা এর মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, যে সকল নেতারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, তারা নিজেদের সুবিধার জন্য অন্যদের বিপদে ফেলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, "শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর জন্য উসকানি দিচ্ছেন, তবে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।”
এদিকে, “শেখ হাসিনার দলীয় মিছিলে নেতৃত্বদানকারী পলাতক নেতারা এখনকার পরিস্থিতিতে আরেকটু আগে যদি পালিয়ে যেতেন, তবে হয়তো ভালো হতো,” বলে মন্তব্য করেছেন অনেক সিনিয়র নেতা। তারা মনে করছেন, “এটি একটি কৌশল যা নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলার পথে।”
শেখ হাসিনার নতুন কৌশল এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদের মধ্যে পড়ে যাওয়া এই পরিস্থিতি নিয়ে একদিকে বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, অন্যদিকে সাধারণ নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। দেশের রাজনীতির এই অস্থিরতা কেবল শেখ হাসিনার জন্য নয়, দলের জন্যও বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সব কিছুর পরও, নেতাদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ বেড়ে চলেছে, এবং দলের সাধারণ কর্মীরা একটি নতুন নেতৃত্বের আশায় পথ চলছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ