
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অবশেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে কাতারের রাজপরিবারের সরবরাহকৃত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, যেটিতে তিনি এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ছিলেন।
এই প্রত্যাবর্তন শুধু বিএনপির জন্য নয়, গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার পাশাপাশি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও খুব শিগগিরই দেশের মাটিতে ফিরবেন। এই ঘোষণার ফলে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন জোয়ার আসবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় ‘ফিরোজা’য় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. জাহিদ বলেন, "দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরে আসবেন। তিনি বিদেশ থেকে শুধু বিএনপির নেতৃত্বই দেননি, বরং গোটা দেশের গণতান্ত্রিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ, সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, তিনি নিজেই এ দেশের মাঠে এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন।"
তিনি আরও জানান, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ইতিমধ্যে দেশে এসেছেন। তিনি ১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক বাধা ও সরকারপৃষ্ঠপোষিত নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশে ফিরতে পারেননি। এবার তিনি ফিরেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তবে কতদিন থাকবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। সম্ভবত কিছুদিনের মধ্যেই আবার লন্ডনে ফিরে গিয়ে স্বামী তারেক রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরবেন।
তারেক-জুবাইদা দম্পতির একমাত্র কন্যা জাইমা রহমান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। ডা. জাহিদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ভবিষ্যতে জাইমা রহমানকে কেন্দ্র করেও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নতুন ধারা পেতে পারে।
খালেদা জিয়ার দীর্ঘ ভ্রমণ ও বয়সজনিত নানা জটিলতার কারণে শারীরিক অবস্থা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও, তার মানসিক দৃঢ়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. জাহিদ। তিনি বলেন, "১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ ভ্রমণে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে কিছুটা ক্লান্ত, তবে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তার দেশে ফেরার পেছনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এজন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।"
চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। তার যাত্রার সব দায়িত্ব নেয় কাতারের রাজপরিবার। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয়। মানবিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার পর খালেদা জিয়া আপাতত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, কিছুদিন বিশ্রামের পর তিনি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন। বিএনপির একটি জ্যেষ্ঠ সূত্র জানায়, তার ফেরা শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, এটি দলীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে বড় একটি বার্তা বহন করছে।
তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের প্রত্যাবর্তনের আভাস, সঙ্গে খালেদা জিয়ার সক্রিয়তায় বিএনপির রাজনীতিতে এখন নতুন গতি সঞ্চার হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকেই বলছেন, এটি হতে পারে নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি এবং আন্দোলন জোরদার করার অংশ। সরকারের সঙ্গে সংলাপ, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যু এবং আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সমন্বয় নিয়েও নতুন কৌশল নির্ধারণে এই পরিবারিক প্রত্যাবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
দীর্ঘদিন লন্ডনে রাজনৈতিক নির্বাসনে থাকার পর যদি তারেক রহমান সত্যিই দেশে ফেরেন, তবে তা হতে পারে বিএনপির রাজনীতির এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। ইতিমধ্যেই দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যাপক উদ্দীপনায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। আর খালেদা জিয়ার ফিরে আসা দিয়ে সেই প্রত্যাবর্তনের যাত্রা শুরু হলো বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ