ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সামরিক টানাপোড়েন আরও গভীর রূপ নিচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারতীয় ড্রোনের অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে গিয়ে তারা এখন পর্যন্ত ২৫টি ইসরায়েলি তৈরি হেরোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে সফট-কিল এবং হার্ড-কিল প্রযুক্তির সমন্বয়ে, যা যথাক্রমে বৈদ্যুতিক ব্যাঘাত ও সরাসরি অস্ত্র ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের ড্রোন ধ্বংস করার কৌশল।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, সীমান্তে নজরদারি এবং আকাশসীমা রক্ষায় নিয়োজিত ইউনিটগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ড্রোনগুলো শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে। ধ্বংস করা ড্রোনগুলোর ধ্বংসাবশেষ ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেগুলোর প্রযুক্তি ও কাঠামো বিশ্লেষণ করে আরও প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা আগে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৭ ও ৮ মে’র রাত থেকে ভারত লাগাতার ড্রোন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি জানান, শুধুমাত্র ওই দুই রাতেই পাকিস্তান অন্তত ১২টি ড্রোন গুলি করে নামাতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমরা আমাদের আকাশসীমার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস করবো না। ভারতীয় উসকানির বিরুদ্ধে কড়া জবাব দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও দিতে প্রস্তুত।”
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় ড্রোনগুলো পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর নজরদারি চালাতে চাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সক্রিয় ও সতর্ক থাকায় সেগুলো কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।
ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে এক বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ৮ মে বৃহস্পতিবার সকালে এই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও পাকিস্তানের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল জিও টিভি। তবে এই বিস্ফোরণের উৎস কী, এটি কোনো হামলা কি না, কিংবা এতে কেউ হতাহত হয়েছে কি না—সে বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এখনো কিছু জানায়নি।
এই বিস্ফোরণের আগের দিন, ৭ মে বুধবার ভোরে পাকিস্তানের অন্তত ৯টি স্থানে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বরাতে জানা গেছে, ওই হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। এসব হামলায় মোট ২৪টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল সামরিক ঘাঁটি, নিরাপত্তা চৌকি এবং সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের আস্তানা।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, কাশ্মীরের পহেলগামে ২১ এপ্রিল সংঘটিত একটি ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রাণ হারান, যা ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ভারত ওই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে এবং দাবি করছে, এটি তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অংশ।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘাত আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের সামরিক প্রতিক্রিয়া এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদে সীমান্ত অঞ্চলে মানবিক সংকট ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে সরে আসার জন্য দুই দেশকেই সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে মাঠের পরিস্থিতি বলছে, আপাতত সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



