
ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ ২০০৮ সালে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর কেটেছে দীর্ঘ ১৭ বছর। অবশেষে সেই দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। আজ মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে একসঙ্গে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে বহনকারী বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কাতারের আমিরের সৌজন্যে পাঠানো হয়। লন্ডন থেকে উড্ডয়নের পর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে প্লেনফাইন্ডার-এর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার দুই পুত্রবধূ—ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শার্মিলা রহমান। সঙ্গে ছিলেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনও।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ডা. জোবাইদা রহমানও। কারণ, তিনি শুধু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী নন—তার নিজের পরিচয়ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক রক্তসূত্রে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত মুক্তিযুদ্ধ ও সামরিক-অভ্যুত্থানের যুগসন্ধির ঐতিহাসিক পর্বগুলোর সঙ্গে।
ডা. জোবাইদা রহমানের জন্ম সিলেট জেলায়। তার পিতা প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী ছিলেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান। তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দায়িত্ব পালন করেন। পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। জোবাইদার চাচা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী। এই রক্তসম্পর্ক ও পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস তাকে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে দেয়।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তার স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় দেশ ছাড়েন জোবাইদা। তখন থেকেই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন তারা। সেখানেই ডা. জোবাইদা লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসসহ বিভিন্ন চিকিৎসা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। যদিও রাজনৈতিকভাবে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন না, তবে দলের অভ্যন্তরে তাকে একজন সম্ভাব্য নেতৃত্বদায়ী ভবিষ্যৎ মুখ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অনেকেই মনে করেন, তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞান, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা তাকে আগামী দিনে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দিকে এগিয়ে দেবে।
খালেদা জিয়ার দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকেই রাজধানীজুড়ে ছিল উত্তেজনা। সকাল থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষায় ছিলেন দলের চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে। গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত ‘ফিরোজা’ বাসভবনকে সাজানো হয় নতুন করে। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির জানান, “বেগম জিয়ার জন্য বাসভবন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ও চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ফিরোজা পৌঁছায়। সেখানেও স্লোগান, ভালোবাসা, এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষার আবেগ নিয়ে নেতাকর্মীরা স্বাগত জানান দলনেত্রীকে। সঙ্গে দেশে ফেরা পুত্রবধূদের প্রতিও ছিল দৃষ্টান্তমূলক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জোবাইদা রহমানের দেশে ফেরা নিছক পারিবারিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশলগত ইঙ্গিত বহন করে। খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতা, এবং তারেক রহমানের প্রবাস জীবন—সবকিছু মিলিয়ে ভবিষ্যতের বিএনপির নেতৃত্বের প্রশ্নে জোবাইদা রহমানের ভূমিকা নিয়ে জল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। আজকের প্রত্যাবর্তন সেই আলোচনাকে আরও নতুন মাত্রা দিল।
তবে দলীয় সূত্রে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। দলীয় নেতা-কর্মীরা তার প্রত্যাবর্তনকে প্রতীকী ও আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন।
বিএনপির দুই গুরুত্বপূর্ণ পরিবার সদস্য—তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও কোকোর স্ত্রী শারমিলা রহমানের দেশে ফেরা দলীয় ঘরানায় অভ্যন্তরীণ উৎসাহ ও আশাবাদ তৈরি করেছে। চিকিৎসা, পরিবার এবং রাজনৈতিক পুনর্গঠনের এই মুহূর্তগুলো দলটির সামনে একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই প্রত্যাবর্তন কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনই বলা না গেলেও, আজকের দিনটি বিএনপি তথা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ