
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মব ভায়োলেন্স বা গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মবসংশ্লিষ্ট গণপিটুনির ঘটনায় সারা দেশে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পরের চার মাসে এ সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ১৪৩ জনে পৌঁছেছে।
অপরাধ গবেষক ও আইনসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং সামাজিক অবক্ষয় মব ভায়োলেন্সের মূল কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, "ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ নানা স্বার্থে মব ভায়োলেন্স সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখনই শক্তভাবে প্রতিরোধ করা না গেলে তা ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে পড়বে।"
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত মব তথা গণপিটুনির ঘটনায় সারা দেশে ৩২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৩। এইচআরএসএস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ২০১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত এবং ৮৮ জন আহত হন।
২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে নিহত হন।
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জেল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
২৭ এপ্রিল গাজীপুরের পূবাইলে এক কিশোরকে বলাৎকারের অভিযোগ তুলে মসজিদের এক ইমামকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।
২৯ এপ্রিল রাজধানীর কাকরাইলে ছোট পর্দার অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, "উন্নত বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মব ভায়োলেন্সসহ অন্যান্য অপরাধ কম। তবে পট পরিবর্তনের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী মব ভায়োলেন্স করছে। পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে মব বিশৃঙ্খলা কমে আসবে।"
পুলিশের সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, "মবের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃশ্যমান শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধীরা ছাড় পেলে সমাজে ভিন্ন বার্তা যাবে।"
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, "অনেক হয়েছে। কারও কোনো কিছু বলার থাকলে আইনের আশ্রয় নেবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মব ভায়োলেন্স রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
মব ভায়োলেন্স একটি সামাজিক ব্যাধি, যা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এটি রোধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ