
ছবি: সংগৃহীত
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোতে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল ইসলাম।
এই নির্দেশনা এমন এক সময় এলো, যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এক অস্থিরতা ও শঙ্কার আবহ তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বুধবার (৭ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনে ‘বাংলাদেশ পুলিশ বার্ষিক শুটিং প্রতিযোগিতা এবং আইজিপি কাপ-২০২৪’-এর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই নির্দেশনার কথা জানান আইজিপি বাহারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত ঘিরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়—সে বিষয়ে আমরা সতর্ক। সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেন কোনো ধরনের জঙ্গি বা সন্ত্রাসী দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্তঘেঁষা সব জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এ ধরনের পরিস্থিতিতে বহিরাগত কোনো গোষ্ঠী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে পারে। তাই সীমান্ত এলাকার পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সন্দেহজনক চলাচল, অপরিচিত ব্যক্তিদের গতিবিধি এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করতে হবে।”
এদিকে, ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দুদেশের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে দুই পক্ষকে কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ সবসময়ই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সম্মান এবং কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পক্ষে। ভারত ও পাকিস্তান দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রই যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয় যা এই অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।”
ঢাকা আশা প্রকাশ করেছে, দুই দেশের সরকার শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নেবে এবং সামরিক উত্তেজনা আরও বাড়ানো থেকে বিরত থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ধাক্কা সরাসরি বাংলাদেশে না লাগলেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়তে পারে সীমান্ত নিরাপত্তা, শরণার্থী প্রবাহ, জঙ্গি তৎপরতা বা চোরাচালান বৃদ্ধি ইত্যাদি দিক দিয়ে। এজন্য আগেভাগেই পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য বলেও মত দিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, র্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, রেলস্টেশন এবং নদীবন্দর এলাকাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং কূটনৈতিক মহলের সমন্বিত এই প্রস্তুতি দক্ষিণ এশিয়ায় সম্ভাব্য অস্থিরতার মুখেও দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ