
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভারতের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে তার “কঠোর ও উপযুক্ত জবাব” দেওয়া হবে। চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে দিল্লিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন। জয়শঙ্করের বক্তব্যে আবারও উঠে এসেছে, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে আত্মঘাতী হামলার পর পরিস্থিতি যেভাবে মোড় নিয়েছে, ভারত তা হালকাভাবে দেখছে না এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবে না।
বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, কিন্তু যদি কেউ মনে করে ভারত দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং সামরিকভাবে চেপে ধরলে আমরা নীরব থাকবো—তাহলে সেটা বড় ভুল হবে। আমরা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না, কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে যদি হামলা হয়, তাহলে তার কঠিনতম জবাব দেওয়া হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “ইরান আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও প্রতিবেশী। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।” এমন একটি সময়ে এই মন্তব্য এল, যখন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবারও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে এবং দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে মৃত্যু ও ধ্বংসের ঘটনা ঘটছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের আগেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, ভারতের হামলায় তাদের দেশে বহু সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের বিমান হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে, যদিও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠকে বলেন, পহেলগামে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর যেভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে, তাতে ভারত চুপ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, “আমরা শুধু প্রতিশোধ নিইনি, আমরা বার্তা দিয়েছি—এবার থেকে ভারত কেবল প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্রয়োজনে আগ বাড়িয়েও ব্যবস্থা নেবে।”
রাজনাথ সিং আরও জানান, পাকিস্তানে যে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে, তা এখনও শেষ হয়নি। “এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়মিত নজরদারি করছে। যদি আবার কোনো হুমকি আসে, আমরা ফের হামলা চালাতে দ্বিধা করব না,” বলেন তিনি।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এই বারবার হুঁশিয়ারি এবং আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক ও সামরিক ভাষ্য পাকিস্তানকে আরও রক্ষণাত্মক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইসলামাবাদ একদিকে দাবি করছে, ভারত সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তাদের অভ্যন্তরে হামলা চালাচ্ছে, অন্যদিকে পাকিস্তান নিজেও ড্রোন ভূপাতিত করে পাল্টা সামরিক সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে আরও বড় সংঘর্ষের দিকে গড়াতে পারে যদি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ না আসে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষের বক্তব্যে এখন আর কূটনৈতিক নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে না—বরং দুই দেশই নিজেদের প্রতিরক্ষাকে জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে রূপান্তরিত করেছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে উভয় দেশকে সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু মাঠের বাস্তবতায় দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান আরও কঠোর করছে, যার ফলে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়ছে।
সূত্র: বিবিসি
বাংলাবার্তা/এমএইচ