
ছবি: সংগৃহীত
টেলিভিশন অঙ্গনের দুই জনপ্রিয় মুখ—অভিনেতা শামীম হাসান সরকার এবং অভিনেত্রী অহনা রহমান—তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে চলমান বিতর্কে আবারও শিরোনামে উঠে এসেছেন। এক সময়ের ঘনিষ্ঠতা, পরে বিচ্ছেদ এবং তারপর একের পর এক প্রকাশ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে বিষয়টি এখন রীতিমতো নাটকীয় মোড় নিয়েছে। সর্বশেষ ‘ডাবল টাইমিং’-এর অভিযোগ ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে তাদের অতীত সম্পর্কের জটিলতা।
অহনা ও শামীমের সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল ছোট পর্দায় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে। তবে এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বিচ্ছেদের পর অহনা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে একজন ‘সাবেক প্রেমিক’কে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। যদিও সেসব বক্তব্যে সরাসরি নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা এবং অঙ্গভঙ্গি দেখে নেটিজেনদের অনেকেই ধরে নেন, ওই সাবেক প্রেমিক হচ্ছেন শামীম হাসান সরকার।
এই প্রসঙ্গে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলেন শামীম। একপর্যায়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শামীম স্পষ্ট করে বলেন, “যাকে অহনা সাবেক বলছেন, আমি সেই ব্যক্তি নই।” তিনি দাবি করেন, অহনার ওই সাবেক প্রেমিক আসলে ‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়, যার সঙ্গে অহনার দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিল। বিপরীতে শামীমের সঙ্গে তার সম্পর্ক মাত্র সাত মাসের ছিল।
এখানেই থেমে থাকেননি শামীম। বুধবার (৭ মে) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি স্পষ্ট ভাষায় অহনার বিরুদ্ধে ‘ডাবল টাইমিং’-এর অভিযোগ আনেন। শামীম বলেন, “আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল মাত্র সাত মাস। কিন্তু ওই সময়েও হৃদয়ের সঙ্গে তার পাঁচ বছরের সম্পর্ক চলছিল। অর্থাৎ, ডাবল টাইমিং করেছেন অহনাই।”
এই মন্তব্য ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় নতুন বিতর্ক। শামীম বলেন, “অহনা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রেমিককে ‘অমানুষ’ এবং ‘জানোয়ার’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর থেকেই ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ আমাকে ট্যাগ করে বলছে, আমি বুঝি সেই সাবেক! এমনকি প্রিয়াংকা প্রিয়াও সেই ভিডিও শেয়ার করে আমাকে উদ্দেশ্য করে পোস্ট করেছেন।”
এই অবস্থায় পরিস্থিতি পরিষ্কার করতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করা জরুরি মনে করেন শামীম।
শামীমের এমন বক্তব্যের পরদিনই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান অহনা। তিনি লেখেন, “ডাবল টাইমিং? আপনি যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন কি? নিজের দোষ ঢাকতেই কি এমন অপবাদ দিয়েছেন?” একইসঙ্গে অহনা সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ জানান, তাকে যেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে অন্যের গল্পে টেনে না আনা হয়। তাঁর কথায়, “দয়া করে অন্যের গল্পে আমাকে জড়িয়ে হেডলাইন করবেন না।”
শামীমের বিরুদ্ধে এই সময় আরও একটি বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়, যা মূল বিতর্ককে আরও ঘোলাটে করে তোলে। অভিনেত্রী প্রিয়াংকা প্রিয়া শামীমের বিরুদ্ধে শুটিং সেটে দুর্ব্যবহার, মাদক গ্রহণ এবং প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “শুটিং সেটে শামীম আমাকে গালিগালাজ করেন, গায়ে হাত তোলেন এবং মাদক সেবন করে আচরণ করেন।” এমনকি প্রকাশ্যেও নাকি ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
এই অভিযোগের জবাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে শামীম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমি সেসব কিছু করিনি। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। শুটিং সেটের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখলেই সত্যতা বোঝা যাবে।”
পুরো ঘটনা যেন এক জটিল সম্পর্কের জালে বন্দি তিনটি মুখ—শামীম, অহনা ও প্রিয়াংকা। শামীম একদিকে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষায় ব্যস্ত, অন্যদিকে অহনা ও প্রিয়াংকা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। কেউ কাউকে সরাসরি অভিযুক্ত করছেন না, আবার প্রত্যক্ষভাবেও ছাড় দিচ্ছেন না।
বিশেষ করে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই ব্যক্তিগত সম্পর্কের কাহিনি এখন আর শুধু তিনজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—এটি রীতিমতো গণমাধ্যম ও নেটিজেনদের চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এই মুহূর্তে বলা মুশকিল, আসলে কে সত্য বলছেন এবং কে মিথ্যা। সম্পর্কের ভাঙন, ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং সামাজিক প্রতিপত্তির লড়াই মিলে পুরো বিষয়টিকে ঘোলাটে করে তুলেছে। তবে এটা নিশ্চিত, এই বিতর্ক সামনের দিনগুলোতেও মিডিয়া ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আলোচনার শীর্ষে থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ