
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীর ইস্যু ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। আজ বুধবার (৭ মে) দুপুরে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশ দুটিকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, যে কোনো মূল্যে যেন এ উত্তেজনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন না করে, সে লক্ষ্যে উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক পথে ফিরে আসতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় সাম্প্রতিক গোলাগুলিতে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার উদ্বিগ্ন। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মনে করে, এখন সময় সংযম দেখানোর এবং ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে ভারত ও পাকিস্তানকে উত্তেজনাকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।”
বিবৃতিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করা হয়, যেখানে বলা হয়—ঢাকা সবসময় প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পক্ষে। যুদ্ধ বা সংঘাতের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, বরং সংলাপ ও আলোচনাই উত্তেজনা নিরসনের সর্বোত্তম পথ।
ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলায় ইতোমধ্যে দুই দেশের ৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ভারতের বিমান হামলায় তাদের অন্তত ২৬ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের পাল্টা গোলাবর্ষণে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং বহু আহত হয়েছেন।
এই পটভূমিতে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূলনীতি। বাংলাদেশ মনে করে, কোনো সংঘাতই মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না—বরং এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ সরকার তাই ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই আহ্বান জানিয়েছে, উস্কানিমূলক ভাষা ও কর্মকাণ্ড পরিহার করে শান্তির পথে এগিয়ে আসতে, যাতে করে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন না হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিকে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিকরা একটি সময়োপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ