
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রযুক্তিনির্ভর, করদাতা-বান্ধব সেবার ফলেই আয়কর রিটার্ন দাখিলে দেশজুড়ে অনলাইনমুখী প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে এবার নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। করদানের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, সহজতা এবং সময় সাশ্রয়ের সুযোগ থাকায় এরই মধ্যে ১৬ লাখেরও বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআর।
এই সংখ্যাটি গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি, যা কর সংস্কার এবং কর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল রূপান্তরের একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই ২০ লাখেরও বেশি করদাতা 'ই-রিটার্ন' সেবায় নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মানে, ভবিষ্যতে এই করদাতারা অনলাইনেই রিটার্ন জমা দেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছেন, যা কর ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক চিত্র নির্দেশ করে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করদাতাদের মতামত, চাহিদা এবং ব্যবহারিক অসুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করে রিটার্ন দাখিলের অনলাইন পদ্ধতিকে আরও সহজ, স্বচ্ছ ও ব্যবহারবান্ধব করে তোলা হয়েছে। ফলে যেকোনো স্থান থেকে, যেকোনো সময়, এমনকি আয়কর দিবস শেষ হওয়ার পরেও করদাতারা নিরবচ্ছিন্নভাবে এই ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। এটি অনেকের জন্য সময় ও ঝামেলা কমানোর পাশাপাশি দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফিজিক্যালি রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দূর করেছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আয়কর দাখিলে যদি কোনো ভুল, অসঙ্গতি বা তথ্যগত বিভ্রান্তি থেকে থাকে, তাহলে করদাতারা এখন অনলাইনের মাধ্যমেই সেই ভুল সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন। আয়কর আইন ২০২৩-এর ১৮০(১) ধারায় বলা হয়েছে, মূল রিটার্ন দাখিলের ১৮০ দিনের মধ্যে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করা যাবে। এই সেবাটিও এনবিআরের ই-সিস্টেমের মধ্যেই সংযুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ২২৫ জন করদাতা অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআর।
কর প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশনের এই ধারা অনেক করদাতাকে কর প্রদানে আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অতীতে করদানের ঝামেলা, জটিলতা ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে অনেকেই নিরুৎসাহিত হতেন। কিন্তু অনলাইনভিত্তিক এই স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ ব্যবস্থায় আস্থা বেড়েছে সাধারণ করদাতার মধ্যে। বিশেষ করে তরুণ পেশাজীবী, উদ্যোক্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি-সচেতন নাগরিকদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
এনবিআর এক বিবৃতিতে দেশজুড়ে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে আগ্রহী সম্মানিত করদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে সবাইকে করসচেতনতা ও কর প্রদানে উৎসাহিত করতে কর ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তরে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর প্রদানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য শুধু প্রযুক্তিগত সুবিধা নয়, পাশাপাশি কর হারে যৌক্তিকতা, পুরস্কার-ভিত্তিক উৎসাহ এবং কর ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি। এনবিআরের নতুন রূপান্তরের এধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত করা হলে করজালও অনেক বড় হবে এবং রাজস্ব আয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ