
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চলতি অর্থবছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি আনতে নতুন করে ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। বুধবার (৭ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত পরিকল্পনা কমিশন প্রাঙ্গণের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্প সহায়তা বা বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ১৪৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।
এই ব্যয়ের কাঠামো থেকেই বোঝা যায়, সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নির্ভরযোগ্য অভ্যন্তরীণ উৎসের পাশাপাশি বৈদেশিক সহযোগিতার ওপরও কিছুটা নির্ভর করছে, তবে এখনো প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নকেই।
এই ৯টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, পানি ব্যবস্থাপনা ও গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচি। তবে প্রকল্পগুলোর সুনির্দিষ্ট বিবরণ একনেক সভা শেষে আলাদাভাবে জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলোর বড় একটি অংশ জেলাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়িত হবে।
উল্লেখ্য, গত এক বছর ধরেই সরকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক ও সংযত নীতি অনুসরণ করছে। বিশেষত প্রকল্পের ব্যয় সাশ্রয়, সময়মতো বাস্তবায়ন এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পরিহারে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয় কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
একনেক সভার আলোচনায় উচ্চশিক্ষার প্রসঙ্গও উঠে আসে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “জেলায় জেলায় প্রতিষ্ঠিত নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকার এখনো নিশ্চিত নয়। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, শিক্ষক সংকট প্রকট এবং শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ।”
এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে জেলা পর্যায়ে নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন বা সম্প্রসারণের জন্য সরকারের তরফ থেকে নতুন প্রকল্প হাতে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে যদি এই প্রকল্প নেওয়া হয়ও, তা হবে বিশেষ বিবেচনায় এবং কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের পর।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় একটি বাস্তববাদী পদক্ষেপ। কারণ একদিকে যেমন বাজেট ঘাটতির চাপ রয়েছে, অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে না রেখে অবকাঠামো বাড়ানো হলে তা হতে পারে সম্পূর্ণ অপচয়।
সভায় অতীতের অনুমোদিত কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে বগুড়ায় বিসিকের দ্বিতীয় শিল্পপার্ক নির্মাণ প্রকল্প বিশেষভাবে আলোচিত হয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। নথিপত্রেই ঘুরপাক খাচ্ছে কার্যক্রম, জমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো নকশা, প্রয়োজনীয় অনুমোদন—সবই আটকে আছে প্রশাসনিক জটিলতায়।
প্রকল্পের গতি ফেরাতে একনেক থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়কে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা যায়।
এবারের একনেক সভা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সরকার এখন উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরও বাস্তবমুখী ও কার্যকর হতে চাইছে। অকার্যকর প্রকল্পের ঝুঁকি এড়িয়ে দরকারি ও জনমুখী প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা, শিল্পায়ন ও অবকাঠামো খাতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে চাইছে সরকার।
সরকারি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনতে নিয়মিতভাবে একনেক সভা আয়োজন ও প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা হচ্ছে, যা আগামী অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ