
ছবি: সংগৃহীত
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের চলমান শাটডাউন কর্মসূচি সাময়িকভাবে শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করবেন এবং পরীক্ষার ফরম পূরণ করবেন না। শিক্ষকদের অনুরোধের পর তারা ইনস্টিটিউটের তালা খুলে দিয়ে ক্লাসে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ, ৮ মে (বৃহস্পতিবার), সকাল ১১টা থেকে দেশব্যাপী সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খুলে দেওয়া হবে। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, তাদের ছয় দফা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনও পরীক্ষায় অংশ নেবেন না। শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে, যেখানে আন্দোলনের পাশাপাশি শিক্ষার স্বার্থে তারা ক্লাসে ফিরতে রাজি হয়েছেন।
গত ৭ মে, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আইডিইবির উদ্যোগে একটি যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক ও আইডিইবির প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার আহ্বান জানান। শিক্ষকদের এই আহ্বান এবং শিক্ষার স্বার্থে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন শাটডাউন কর্মসূচি সাময়িকভাবে শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা ‘কারিগরি শিক্ষা সপ্তাহে’ শিক্ষক সমাজের আন্তরিকতা এবং সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল করেছেন। এই সময়ের মধ্যে, ৮ মে থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর ক্লাস কার্যক্রম চালু থাকবে। তবে, যদি তাদের ছয় দফা দাবি নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না ঘটে, তারা আবারও আন্দোলন জোরদার করবেন।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলেও গত কয়েক মাসে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তাদের ছয় দফা দাবি ছিল—স্কলারশিপ বৃদ্ধি, শিক্ষক নিয়োগ, প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরীক্ষার সুষ্ঠু পদ্ধতি, এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার দাবি। স্মারকলিপি, মানববন্ধন এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পর ১৬ এপ্রিল তারা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে বড় বিক্ষোভ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাদের এই আন্দোলন দেশজুড়ে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের ছয় দফা দাবির প্রতি সরকারের কোনও কার্যকর প্রতিক্রিয়া না পেলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে। তারা আগে থেকেই নানা স্তরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তবে যথাযথ পদক্ষেপ না পাওয়ায় ২৯ এপ্রিল থেকে তারা সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে, শিক্ষকরা তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার আহ্বান জানালে এবং শিক্ষার স্বার্থে শাটডাউন কর্মসূচি শিথিলের অনুরোধ করা হলে শিক্ষার্থীরা এটি মান্য করেছেন। তবে তারা যে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা সমঝোতা সম্ভব নয়, এবং তারা বলছেন যে তাদের আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সরকারকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এখন, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের শাটডাউন শিথিল করা হলেও, তাদের দাবিগুলোর ব্যাপারে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন পুনরায় শুরু করবেন। তাদের আন্দোলন শুধু পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে এক বড় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
এই আন্দোলনকারীদের দাবি শুধু তাদের স্বার্থেই নয়, বরং পুরো দেশের কারিগরি শিক্ষার উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে সঠিক অবকাঠামো, নিয়োগ এবং শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হলে তা বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার মান আরও উন্নত করবে এবং দেশীয় শ্রমবাজারে যোগ্য কর্মী তৈরি হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ