
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে দ্রুত গতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার তোড়জোড় চলছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। একই দিনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি (CCS) বৈঠকও বসছে।
সর্বদলীয় এই বৈঠক ও CCS বৈঠককে ঘিরে ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র উত্তেজনা এবং প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বৈঠক দুটির মূল উদ্দেশ্য, সম্প্রতি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পরিচালিত ‘অপারেশন সিন্দুর’ সম্পর্কে বিরোধী নেতাদের অবহিত করা এবং সীমান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ভারতের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে সর্বসম্মত মতামত গঠন করা।
হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং এনডিটিভি-সহ ভারতের একাধিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মোদি সরকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এই বৈঠকে পাকিস্তানে ভারতীয় সামরিক অভিযানের বর্তমান অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, এবং পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফিং দেওয়া হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রদর্শন করতে চাইছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলেও বার্তা দিচ্ছে যে, ভারতের সব রাজনৈতিক শক্তি পাকিস্তান সংক্রান্ত জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ।
সূত্রমতে, বৈঠকে বিরোধী দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে, পাকিস্তান যদি ভারতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নির্ধারণে এই মতামত বিবেচনায় নেওয়া হবে।
একই দিনে সকাল ১১টায় শুরু হচ্ছে ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির (Cabinet Committee on Security – CCS) বৈঠক। এ বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখানে উপস্থিত থাকবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত দোভাল এবং সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের প্রস্তুতি, সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার করা, এবং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যার কৌশল চূড়ান্ত করা হতে পারে।
এর আগে, বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন। রাষ্ট্রপতির দপ্তরের পক্ষ থেকে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে ‘অপারেশন সিন্দুর’ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এই অভিযানের বিস্তারিত জানিয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ও সমর্থনও গ্রহণ করেন তিনি।
ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে একটি গোপন আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম TRT World-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে এবং উত্তেজনা কমাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।”
এদিকে ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী (ISPR) জানিয়েছে, তারা ভারতের একটি ব্রিগেড সদর দফতর এবং কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। একই সঙ্গে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফাল, একটি মিগ-২৯ এবং একটি এসইউ-৩০। ফরাসি গোয়েন্দা সূত্র একটি রাফাল ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে আজকের সর্বদলীয় বৈঠক এবং CCS বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই বৈঠকগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ভারতের কৌশলগত ভবিষ্যৎ পথনকশা, যা উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নাটকীয়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ