
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে উদ্বেগের ছায়া ফেলেছে ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সশস্ত্র সংঘর্ষ। কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যকার চরম উত্তেজনার জেরে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। নিহতদের মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ জন এবং ভারতে ১৫ জন রয়েছে। এছাড়া দুই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু মানুষ আহত হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো।
এই সংঘর্ষ শুরু হয় ভারতের একটি বিমান হামলার মাধ্যমে। পাকিস্তানের দাবি, মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের অন্তত ২৬ জন নাগরিক নিহত হন এবং আরও ৪৬ জন আহত হন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর আইএসপিআর-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারতের আঘাতে পাকিস্তানের ছয়টি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নিহত ও আহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকাগুলোতে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে। এ সময় ভারত শাসিত কাশ্মীরে কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান এবং আরও ৪৩ জন আহত হন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলাবর্ষণের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং মেন্ধার এলাকায়। এসব অঞ্চলে স্থানীয় ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও অবকাঠামো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পুঞ্চের স্থানীয় সাংবাদিক জামরুদ মুঘল বিবিসিকে ফোনে জানান, “বুধবার রাত ছিল বিভীষিকাময়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মানুষ রাতভর ঘুমাতে পারেনি। আতঙ্কে সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়েছে। স্থানীয় হাসপাতাল এখন আহত মানুষে পরিপূর্ণ।”
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি, তবে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে যে সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং বেশ কিছু বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে পাকিস্তানী সেনারা গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দুই পারমাণবিক প্রতিবেশী দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং কূটনৈতিক পথে উত্তেজনা নিরসনের তাগিদ দিয়েছে।
বাংলাদেশও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সংঘাত যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ব্যাহত না করে, সেজন্য উভয় দেশকে সংযত থাকতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে বহু দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে, তবে সাম্প্রতিক সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ভারতের সম্প্রতি পরিচালিত বিমান হামলা এবং তার জবাবে পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সংকটময় করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এ সংঘর্ষ এখনই বন্ধ না হয়, তাহলে এটি সীমান্ত পেরিয়ে বড় আকারের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে, যার প্রভাব শুধু ভারত-পাকিস্তান নয় বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনি দুই দেশের অভ্যন্তরেও জনগণের মাঝে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সামরিক তৎপরতা বন্ধে কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ