
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশে এবার সব ধরনের অফিস ও কর্মস্থলে টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই দীর্ঘ ছুটি শুধু সরকারি দপ্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোও এর আওতায় থাকবে। বুধবার (৭ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এছাড়া এই ১০ দিনের ছুটির ভারসাম্য বজায় রাখতে ১৭ মে ও ২৪ মে, দুই শনিবার সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ভিত্তিতে এই প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়, "জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অংশের ৩৭ নম্বর ক্রমিক অনুযায়ী আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।"
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হয়ে ১৪ জুন (শনিবার) পর্যন্ত এই ছুটি চলবে। এর মধ্যে রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি, নির্বাহী আদেশে ছুটি এবং ঈদের মূল ছুটির দিন। অফিস কার্যক্রমে ভারসাম্য বজায় রাখতে ১৭ মে ও ২৪ মে, দুইটি শনিবার অফিস খোলা থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি—সব ধরণের প্রতিষ্ঠানের ওপর। অর্থাৎ, বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, শিল্পকারখানা, কর্পোরেট অফিস এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও এই ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য থাকবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ছুটি দিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন এবং দেশব্যাপী যানজট ও চাপ কমানোর লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ঈদের সময় কর্মজীবীদের বিশাল একটি অংশ রাজধানীসহ বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান। এতে সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগব্যবস্থায় তীব্র ভিড় ও অসন্তোষ দেখা দেয়। ছুটির সময় দীর্ঘ হওয়ায় এবার মানুষের যাতায়াত কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ড. খন্দকার মাহবুবুর রহমান বলেন, "টানা ছুটির একটি ভালো দিক হচ্ছে মানুষের মানসিক প্রশান্তি ও পরিবারে সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হওয়া। তবে এর সঙ্গে অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি, তাই দুটো শনিবার অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত যথার্থ।"
এই সিদ্ধান্তের পর গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমদের প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেন, “মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সকল স্তরের জনগণের সুবিধা বিবেচনা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটি একদিকে যেমন মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বন্ধ রাখবে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ, কেনাকাটা, খাদ্যপণ্য খাতসহ হোটেল ও পর্যটন খাতে বড় ধরনের বাণিজ্যিক গতি আনবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, “ছুটির সময়ই আমাদের স্থানীয় পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি মুনাফা আসে। এবার ১০ দিনের ছুটি হওয়ায় কক্সবাজার, সিলেট, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কুয়াকাটা—সব পর্যটন এলাকাগুলোতে বিশাল চাপ পড়বে।”
বেসরকারি খাতে এরইমধ্যে ছুটির তালিকা অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ শুরু হয়েছে। কর্পোরেট অফিসগুলো তাদের কর্মীদের আগামভাবে ছুটি ও কাজ ভাগ করে দিতে শুরু করেছে। অনেক বেসরকারি কোম্পানি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতিও আংশিকভাবে চালু রাখবে বলে জানা গেছে।
একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের এইচআর ম্যানেজার রাহেলা ফেরদৌস বলেন, “সরকারের ঘোষণার পরপরই আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ নোটিশ দিয়ে দিয়েছি। যারা ঢাকার বাইরে যাবেন, তারা ৪ জুন পর্যন্ত কাজ শেষ করে যাবেন, বাকিরা ১৫ জুন থেকে স্বাভাবিকভাবে অফিসে যোগ দেবেন।”
এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত মার্চের ২৮ তারিখ থেকে এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ভোগ করেন সরকারি-বেসরকারি কর্মীরা। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটির মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াল ১০ দিনে।
সমগ্র দেশে এই ঘোষণা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলালেও, কিছু মহল আশঙ্কা করছে এত দীর্ঘ ছুটি উৎপাদনশীলতা, রপ্তানি কার্যক্রম এবং শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ছুটির খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। ঢাকার মতিঝিলে কর্মরত ব্যাংক কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, “টানা ছুটি হলে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়। এবার মনে হচ্ছে একটু আরামে ঈদ কাটবে।”
এই দীর্ঘ ছুটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে পারলে তা দেশের মানুষের মানসিক প্রশান্তি ও সামগ্রিক জীবনের মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সচল রাখা এই সময়টিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ