
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর পরিকল্পিত ও আচমকা হামলার ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়। রবিবার (৪ মে) সন্ধ্যার দিকে ব্যক্তিগত কাজে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাঁর গাড়িবহর যানজটে আটকে গেলে একদল দুর্বৃত্ত এই হামলা চালায় বলে নিশ্চিত করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
চোখের পলকে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুলিশ জানায়, চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে আসা ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত হাসনাতের গাড়ির ওপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে এবং লাঠি দিয়ে আঘাত হানে। এতে তাঁর গাড়ির গ্লাস ও সামনের উইন্ডশিল্ড চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। গাড়ির ভেতরে থাকা হাসনাত আবদুল্লাহর হাতে গুরুতর আঘাত লাগে, কনুইয়ের একাধিক স্থানে কেটে রক্তপাত হয়।
এসময় গাড়ি চালক দুলাল মিয়া জানান, “স্যার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে কয়েকটি মোটরসাইকেল আমাদের অনুসরণ করে। চান্দনা চৌরাস্তা পার হওয়ার সময় ঢিল ছুড়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। এরপর ভয়াবহ হামলা শুরু হয়।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাহিদ হাসান বলেন, “গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ঢাকার পথে ফেরার সময়, চান্দনা চৌরাস্তার যানজটে আটকে পড়েন হাসনাত আবদুল্লাহ। এই সুযোগে মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।” পুলিশ আরও জানায়, হামলার পর দ্রুত গাড়িবহর সরিয়ে বোর্ডবাজারের আইইউটি ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেওয়া হয়। সেখান থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে উত্তরা পূর্ব থানায় নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে অন্য একটি গাড়িতে করে রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ঘটনার পরপরই এনসিপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম একটি পোস্টে লিখেন, “হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলেছে, ওনার হাত রক্তাক্ত। কাছাকাছি যারা আছেন, দয়া করে তাঁকে প্রটেক্ট করুন।”
এই পোস্ট মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গাজীপুর জেলার এনসিপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা রাত সাড়ে আটটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পরে রাত ৯টার দিকে মশাল মিছিলও বের করে। তারা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায় এবং দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি তোলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সানিউল আলম বলেন, “হাসনাত ভাইয়ের গাজীপুরে আসার কথা আমরা জানতাম না। এখানে তাঁর কোনো পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিও ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা হয়তো বিষয়টি জানতেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই হামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
হাসনাত আবদুল্লাহ এখন পর্যন্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি সংক্ষেপে বলেন, “এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না, পরে কথা বলব।”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং হামলাকারীদের শনাক্তে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতিও চলেছে।
হাসনাত আবদুল্লাহ এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক এবং কিছুদিন ধরেই তিনি দলীয় সংগঠন পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং রাজনৈতিক অঙ্গনে চাপ তৈরির ইঙ্গিতও হতে পারে।
সার্বিকভাবে, এ হামলা শুধু একজন নেতার ওপর আক্রমণ নয়, বরং একটি উদীয়মান রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে হুমকি বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ