
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা এবং বিদেশি নাগরিকদের কোনো ধরনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন বলছে, এনআইডি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য, এবং কোনোভাবেই অননাগরিকদের এতে অন্তর্ভুক্তি বৈধ নয়। সোমবার (৫ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভায় এই ঘোষণা দেন এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এনআইডি ডাটাবেজে তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত কঠোর ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে কোনো বিদেশি বা রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা নাগরিকের তথ্য অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণে সরকার নির্ধারণ করবে ভিন্ন মন্ত্রণালয়
হুমায়ুন কবীর বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে প্রথমে একটি প্রস্তাব ছিল যে, তাদের বায়োমেট্রিক ও অন্যান্য তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে Application Programming Interface (API)-এর মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল দফতরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দফতরগুলোর কাছেই সংরক্ষিত থাকবে। ইসি চাইলে যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারবে, কিন্তু নিজস্ব ডাটাবেজে রোহিঙ্গাদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করবে না। তবে এই তথ্যের সার্ভার কোথায় থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
এনআইডি সংশোধনে বিকেন্দ্রীকরণ ও দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন হুমায়ুন কবীর। তিনি জানান, বর্তমানে দেশজুড়ে এনআইডি সংশোধনের বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও সংশোধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যাতে আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রশাসনিক বোঝা হালকা হয়। ইতোমধ্যে বিভাগীয় ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “কমিশন এবং সচিবালয় একসঙ্গে কাজ করছে যাতে সাধারণ মানুষের যৌক্তিক আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়। আগামী সপ্তাহ থেকেই সংশোধনের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।”
ডাবল এনআইডির সংখ্যা ও যাচাই সমস্যা
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বর্তমানে এনআইডি ডাটাবেজে প্রায় ৫০০টির মতো ডাবল এনআইডি রয়েছে। প্রতিটি ডাবল আইডি আলাদাভাবে যাচাই করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং প্রযুক্তিগতভাবে জটিল। তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। “আমরা একটি বিশুদ্ধ ও নিরাপদ ডাটাবেজ নিশ্চিত করতে চাই,” বলেন এনআইডি মহাপরিচালক।
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা নেই
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবীর জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কারণে রোহিঙ্গারা আর কোনোভাবেই ভোটার হতে পারবে না। তিনি বলেন, “আমরা সম্প্রতি ৫৬টি বিশেষ উপজেলাসহ দেশব্যাপী নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করেছি। সেই সময়েও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশেষ নজরদারি ছিল। আমাদের সফটওয়্যার ও যাচাই প্রক্রিয়া যথেষ্ট শক্তিশালী, যাতে রাষ্ট্রহীন বা বিদেশি কেউ ভোটার তালিকায় ঢুকে না পড়ে।”
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে কার্যক্রম ৯টি দেশে, লক্ষ্য ৪০
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে হুমায়ুন কবীর জানান, বর্তমানে ৮টি দেশে এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে, এবং আগামী সপ্তাহ থেকে কানাডাতেও তা চালু হবে। ফলে মোট ৯টি দেশে প্রবাসী ভোটার তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। তবে দূতাবাসগুলোতে জায়গা সংকট বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যে মিটিং করেছি। আগামী সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে অন্তত ৪০টি দেশে এই কার্যক্রম বিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।” এসময় তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে এই কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি কারণ সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন মেলেনি।
এনআইডি সেবার আধুনিকায়নে মিডিয়া ও সেমিনার
হুমায়ুন কবীর জানান, এনআইডি সেবার মান ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিডিয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি সেমিনার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এনআইডি সেবাকে সহজ ও জনবান্ধব করতে ভূমিকা রাখছে, তাদেরও এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের রাখা হবে কিনা তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
সবশেষে তিনি বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্র একটি জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেন কোনো অনিয়ম বা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সতর্ক।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ