
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ থেকে আরও জনবল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইতালি। তবে সেই আগ্রহের পাশাপাশি সতর্কতাও জানিয়ে দিয়েছে দেশটি—অবৈধ অভিবাসনের কোনো সুযোগ নেই এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও সচেতন থাকতে হবে। সোমবার (৫ মে) রাজধানীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসির সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বার্তা দেন বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বৈঠকে ইতালির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি বৈধভাবে ইতালিতে অবস্থান করছেন এবং তারা যথেষ্ট দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। এই সুনামের কারণে ইতালি চায় বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিকট ভবিষ্যতে পাঠানো হোক। কিন্তু এ ব্যাপারে শর্তও রয়েছে—কোনোভাবেই যেন অবৈধপথে কেউ ইতালিতে ঢুকতে না পারে। এ নিয়ে ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা এসেছে, যা বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যদের আধুনিক প্রশিক্ষণের বিষয়েও ইতালি সরকার সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে।” এই প্রশিক্ষণ সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পারস্পরিক দক্ষতা উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে আলোচিত হয়েছে দুই দেশের মধ্যে অপরাধ দমন, মানবপাচার প্রতিরোধ এবং সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও। এই প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমরা চাচ্ছি, বৈধ পথে মানুষ বিদেশে যাক, সম্মানজনক কর্মসংস্থান পাক। ইতালি সরকারের পক্ষ থেকেও সেই নীতিকে সমর্থন জানানো হয়েছে।”
এ সময় সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত আরেকটি বিষয় নিয়েও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (জানাপা) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে ‘মব জাস্টিস’-এর নামে কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চায়, তাহলে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ঘটনা ঘটার আগেই যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভাব্য অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে, সে ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মব জাস্টিসের সংস্কৃতি রোধে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে।”
সব মিলিয়ে ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এই বৈঠককে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামীর দিনগুলোতে বৈধ অভিবাসন এবং দক্ষতা উন্নয়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ-ইতালি সম্পর্ক আরও গভীর ও কার্যকর হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ