
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামজুড়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামি দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নেতাকর্মীরা। সোমবার (৫ মে) পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটি চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
এ সময় তারা মাওলানা রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেন এবং অভিযুক্তদের বিচারে গড়িমসির জন্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সড়ক অবরোধের কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন, যান চলাচল অনেক জায়গায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে।
সড়কে বিক্ষোভ, উত্তপ্ত পরিস্থিতি
সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, একে খান এবং সল্টঘোলা ক্রসিং এলাকায় দলে দলে জড়ো হন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কর্মীরা। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও মাইক ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সড়কে বসে পড়ে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এইসব স্থানে যান চলাচল প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
সল্টঘোলা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের থামাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
শহরের বাইরেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হাটহাজারী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বাঁশখালী ও পটিয়া বাইপাসে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দলটির নেতাকর্মীরা।
“ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে”—হুঁশিয়ারি বিক্ষোভকারীদের
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, “আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আর নরম প্রতিবাদ হবে না। মাওলানা রইস উদ্দিনকে যারা হত্যা করেছে, তারা শুধু একজন আলেমকেই নয়, ইসলাম, মসজিদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধকেই অপমান করেছে।”
তারা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত, নির্মম এবং রাষ্ট্রীয় নিরবতার প্রশ্রয়ে সংগঠিত। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই—তদন্তের নামে নাটক চলবে না। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, না হলে দেশজুড়ে অচলাবস্থা তৈরি হবে।”
বিক্ষোভকারীরা আরও বলেন, “যে দেশে আলেম নিরাপদ না, সে দেশে সাধারণ জনগণও নিরাপদ নয়। সরকার যদি খুনিদের পক্ষে থাকে, তাহলে জনগণের আদালতেই বিচার হবে।”
আগের দিন দেওয়া হয়েছিল কর্মসূচির ঘোষণা
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৩ মে) চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে দলটির চেয়ারম্যান আল্লামা কাজী মঈনউদ্দিন আশরাফী ৪ মে ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচির পাশাপাশি ৫ মে সারা দেশে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবারের কর্মসূচি পালন করা হয়।
চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী এবং জরুরি চিকিৎসাসেবাগ্রহীতারা বিপাকে পড়েন। অনেক জায়গায় বাস, সিএনজি, প্রাইভেটকার ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। বিশেষ করে বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর এলাকায় কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি।
বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স অনেক জায়গায় আটকে থাকে, যার ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়নি। তবে স্থানীয় থানা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নেতারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাদের দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে এবং ভবিষ্যতে টানা কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ