
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের বহু কাঙ্ক্ষিত শাপলা প্রতীক না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দলটির দাবি, শাপলা প্রতীকের ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা না থাকলেও কমিশন তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রাহ্য করছে এবং পরিবর্তে থালাবাটি, কাপ-পিরিচ কিংবা উটপাখির মতো প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যা দলীয় নেতাদের কাছে “হাস্যকর ও অসম্মানজনক” বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামটরের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন সংক্রান্ত যে চিঠি পেয়েছি, সেখানে আমাদের প্রতীক হিসেবে আলমিরা, উটপাখি, কাপ-পিরিচ এবং থালাবাটি রাখা হয়েছে। এগুলো প্রতীক হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং এগুলোকে হাস্যকর বললেই যথাযথ হয়। ইসির এ আচরণ আমাদের প্রতি স্পষ্ট বৈষম্য ও স্বেচ্ছাচারিতা।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, এনসিপি শুরু থেকেই শাপলা প্রতীক চেয়ে আসছে। এ প্রতীকে আইনি কোনো জটিলতা নেই এবং কমিশনের পক্ষেও কোনো চাপ থাকার কথা নয়। তার অভিযোগ, “শাপলা প্রতীক বরাদ্দে ইসি অযথা অজুহাত খুঁজছে। আমরা মনে করি, এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে কমিশন আমাদের প্রভাব খর্ব করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতীকের গুরুত্ব অপরিসীম। জনগণ দলকে প্রতীকের মাধ্যমেই চেনে ও মূল্যায়ন করে। অথচ এনসিপির ক্ষেত্রে প্রতীক বাছাইয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে। “অন্য দলগুলো জাতীয় প্রতীকের অনুষঙ্গ থেকে প্রতীক পেয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে অজানা কারণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে,” মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক আরও অভিযোগ করেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিশন একদলীয় অফিসে পরিণত হয়েছে। তাদের কার্যক্রম শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, সংবিধানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
তিনি আরও বলেন, কমিশন যদি সত্যিই স্বাধীন হতো, তবে শাপলা প্রতীকের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি জানাতো না। “এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রতীক না পেলে আমরা কী করব? আমাদের উত্তর হলো— জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাব।”
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “‘জাতীয় লীগ’ নামে একটি দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। অথচ আজ পর্যন্ত আমরা দলটির কোনো সভা, মিছিল বা সেমিনার দেখিনি। কীভাবে তারা নিবন্ধন পাচ্ছে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। এসব কারণে আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ আমলে যেসব রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছিল, তাদের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। তাই সেসব দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান তিনি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতীক তালিকায় যেসব প্রতীক রাখা হয়েছে— আলমিরা, কাপ-পিরিচ, থালাবাটি ও উটপাখি— এসব প্রতীকের কোনো রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক গুরুত্ব নেই। বরং প্রতীকগুলো ভোটারদের কাছে হাস্যরসের জন্ম দিতে পারে, যা একটি জাতীয় রাজনৈতিক দলের মর্যাদার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, “প্রতীক শুধু একটি চিহ্ন নয়, এটি রাজনৈতিক বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতীকী রূপ। অথচ আমাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হচ্ছে, তাতে মনে হয় কমিশন আমাদের দলকে হেয় করতে চাইছে।”
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা এবং অন্য নেতারা। তারা সবাই কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতীক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং শাপলা প্রতীক দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, যদি কমিশন তাদের প্রতীক দাবিকে অগ্রাহ্য করে, তবে তারা আন্দোলনে নামবে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাংবিধানিক সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
এনসিপির অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে এবং হাস্যকর প্রতীক দিয়ে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে। শাপলা প্রতীকের দাবিতে দলটি অনড় রয়েছে এবং এ বিষয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলীয় নেতাদের মতে, কমিশনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, আর এর ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ