
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এবার তারা পাঁচ দফা দাবির পক্ষে ১২ দিনের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যা আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের প্রতি জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, জনগণের আন্দোলনের কোনো প্রতিফলন ঘটছে না। সরকারের উচিত জনগণের দাবি মেনে নেওয়া। যদি সরকার তা উপেক্ষা করে, তবে জনগণ নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বাধ্য হবে। এ কারণেই আমাদের দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি।”
দলটির ঘোষণা অনুযায়ী কর্মসূচির ধাপগুলো হচ্ছে—
১. ১ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ।
২. ১০ অক্টোবর ঢাকায় ও বিভাগীয় শহরে ব্যাপক গণমিছিল।
৩. ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। ন্যায্য অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়েই পরিচালিত হবে। তিনি আরও দাবি করেন, তাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তা ব্যাহত করছে।
জামায়াতের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচনকে পিআর পদ্ধতিতে (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) আয়োজন করা। তাদের দাবিগুলো হলো—
১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
২. নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে।
৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে। বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর এই কর্মসূচি ঘোষণার প্রেক্ষাপট হলো সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বৃদ্ধি। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এর মধ্যেই জামায়াত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলছে, তারা কোনোভাবেই নির্বাচনী দাবির প্রশ্নে আপস করবে না।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের ভাষায়, “জনগণ ন্যায্য অধিকার চায়। সরকার যদি সেই অধিকারকে অস্বীকার করে, তবে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের এই আন্দোলন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ।”
জামায়াতের এই নতুন কর্মসূচি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই সনদের আইনি বৈধতা ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি নিয়ে সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা এখন সবার নজরে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এ ধরনের কর্মসূচি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং নির্বাচনকালীন রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ