
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় পাকিস্তানের উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সফর ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রসঙ্গ। দার দাবি করেন, একাত্তর কোনো অমীমাংসিত ইস্যু নয়, তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বক্তব্যের সঙ্গে প্রকাশ্যেই দ্বিমত পোষণ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
রোববার (২৪ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করবেন না যে, ৫৪ বছরের সমস্যা আজকের এক বৈঠকেই সমাধান হয়ে যাবে। আমরা পরস্পরের অবস্থান তুলে ধরেছি, তবে এটুকু নিশ্চিত করছি যে আলোচনা চলবে। একদিনে এর নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।”
বৈঠকে দু’দেশ কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলোপ চুক্তি সই করে। ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সরকারি, কূটনৈতিক পর্যায়ের ব্যক্তিরা বিনা ভিসায় উভয় দেশে যাতায়াত করতে পারবেন। সাধারণ নাগরিকদের জন্য পাকিস্তান ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার কথাও জানায়।
এছাড়া দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়—
-
বাণিজ্য বিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন,
-
সংস্কৃতি বিনিময় কর্মসূচি,
-
দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির সহযোগিতা,
-
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস ও এপিপিসির মধ্যে সমঝোতা,
-
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইআইএসএস ও পাকিস্তানের আইএসএসআইর মধ্যে সহযোগিতা।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীও ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের অর্থনীতি পারস্পরিকভাবে পরিপূরক—এ কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা চাই বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক। এ সহযোগিতা সরাসরি দুই দেশের জনগণের উপকারে আসবে।”
একাত্তর ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও ২০০২ সালে পারভেজ মোশাররফের সফরে দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়েই এ অধ্যায় শেষ হয়েছে। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে।”
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৌহিদ হোসেন জবাব দেন, “৫৪ বছরের ইস্যু একদিনে নিষ্পত্তি হবে না। আমাদের ইতিহাস ও অবস্থান আমরা স্পষ্ট করেছি। ভবিষ্যতে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে হবে।”
স্বাধীনতার পর এটিই ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, যা প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। দুই পক্ষই জোর দিয়েছে বহুমাত্রিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর, তবে মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ