
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান পার্টির দ্বৈত আধিপত্য অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে। কিন্তু এই পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটাতে চাইছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার পরিকল্পনা করছেন এবং ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক জরিপও চালিয়েছেন, যা তার পরিকল্পনার গুরুত্ব ও সম্ভাবনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
১৮৫০ সাল থেকে যে দুই বড় দল যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিয়েছে, সেখানে মাস্কের এই উদ্যোগ এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হতে পারে। এমন দল গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি প্রায় ১৭৫ বছরের পুরনো রাজনৈতিক ঐতিহ্যের উল্টো ধারা সৃষ্টি করতে পারেন।
ইলন মাস্কের এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান দলের সঙ্গে চলমান বিরোধ একটি বড় কারণ। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের সম্পর্কের অবনতি এবং দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নতুন দল গঠনের ধারণাকে ত্বরান্বিত করেছে।
মাস্ক তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (আগের টুইটার) ব্যবহার করে জনমত জরিপ করেছেন, যেখানে তার বিশাল ২২ কোটি অনুসারীরা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমেরিকায় কি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় এসেছে, যা ৮০ শতাংশ মধ্যপন্থী প্রতিনিধিত্ব করবে?’ প্রাপ্ত ফলাফলে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন।
এই ফলাফলে ইলন মাস্ক নিশ্চিতভাবে জানান, ‘জনগণ তাদের মত প্রকাশ করেছে। আমেরিকায় ৮০ শতাংশ মধ্যপন্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন!’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাই নির্দিষ্ট নিয়ম, যা জনগণের আবেগের প্রতিফলন।’
নতুন দলের নাম নিয়েও মাস্ক ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, যা হলো ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’। এই নামের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা পিএসির (পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি) প্রতিফলন, যা ২০২৪ সালের ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
মাস্ক ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন, তবে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন করার ঘোষণায় তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত হন। ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময় মাস্ককে সরকারি অর্থব্যয়ের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যা তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে।
তবে শেষ কয়েক মাসে এই সম্পর্ক ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে মাস্কের কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য হ্রাস পায়, যা তাদের দ্বন্দ্বকে তীব্র করে তোলে। বর্তমানে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আক্রমণ চালাচ্ছেন।
বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ নিয়ে মাস্কের তীব্র বিরোধিতা এবং তার ‘জঘন্য’ মন্তব্য থেকে শুরু হয়ে কূটনৈতিক আক্রমণ প্রবল হয়। মাস্ক অনুসারীদের মাধ্যমে ট্রাম্পের নির্বাচনী সহায়কতা বাতিল করার আহ্বান জানান এবং তাকে অভিশংসনের দাবিও তুলেছেন।
ট্রাম্পও মাস্ককে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তিনি তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বলেন, ‘ইলন অসহ্য হয়ে উঠেছিলেন’, এবং হোয়াইট হাউস থেকে মাস্ককে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। সম্প্রতি ট্রাম্প এও জানান যে মাস্কের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগের পরিকল্পনা নেই।
তবে মার্কিন আইনপ্রণেতারা মনে করছেন, এই দ্বন্দ্ব শিগগিরই মিটে যাবে এবং তখন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না। ফ্লোরিডার রিপাবলিকান প্রতিনিধি জিমি প্যাট্রোনিস বলেন, ‘মাস্ক নতুন দল তৈরি করবেন না। ট্রাম্প এবং মাস্কের মধ্যে মতবিরোধ স্বাভাবিক, কিন্তু শিগগিরই তারা আবার একযোগে কাজ করবে।’
ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত উদ্যোগ মার্কিন রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি মধ্যপন্থা, উদ্ভাবন এবং আধুনিকতার প্রতিফলন হিসেবে এই দল গঠন করতে চান। ১৭৫ বছরের পুরনো রাজনৈতিক প্রথাকে ভেঙে নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার এই প্রচেষ্টা বিশ্ব রাজনীতিতে নজর কাড়তে পারে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, মাস্কের নেতৃত্বে নতুন দল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নবীন প্রাণ সঞ্চার করবে, যেখানে দুই প্রধান দলের রাজনীতির বাইরেও ভিন্ন মতের জায়গা তৈরি হবে। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে চলমান বিরোধ এবং রাজনৈতিক শক্তি সংহতির ভবিষ্যতই স্পষ্ট করবে এই নতুন দলের সম্ভাবনা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য।
এখন সময় অপেক্ষার, যখন মার্কিন রাজনীতির পর্দায় নতুন রাজনৈতিক দল ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’ কী রূপ নেবে এবং ইলন মাস্ক কতদূর এগোতে সক্ষম হবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ