
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএস। প্রতিবছর এ পরীক্ষাকে ঘিরে লাখো তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির লড়াই চলে। সেই স্বপ্নের লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আর সেই ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল অবশেষে প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থী। এই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার শাখা) মাসুমা আফরীন। আর সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান।
প্রচলিত নিয়মে বিসিএস প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কিন্তু এবারের ৪৭তম বিসিএসে মাত্র ৯ দিনের মাথায় ফলাফল প্রকাশ করে পিএসসি নতুন রেকর্ড গড়েছে। এর আগে ৪৬তম বিসিএসে ১৩ দিনে ফল প্রকাশ হয়েছিল, যা ছিল এ পর্যন্ত দ্রুততম রেকর্ড। এবার সেই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ফলে পরীক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
পিএসসি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রকাশিত ফলাফলে যদি কোনো যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তাহলে কমিশন তা সংশোধন করার অধিকার সংরক্ষণ করে। অর্থাৎ ভুলভ্রান্তি হলে তা সংশোধন করা হবে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একইসঙ্গে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের মোট ২৫৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন প্রার্থী, যা এ পর্যন্ত অন্যতম বৃহৎ আবেদন সংখ্যা। তবে পরীক্ষার দিন অনুপস্থিতির কারণে কিছু প্রার্থী অংশ নিতে পারেননি।
২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এই বিসিএসে ক্যাডার পদে শূন্যপদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭। নন–ক্যাডার পদে সংখ্যা ২০১। অর্থাৎ মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ কারণে এবারের বিসিএসকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ প্রচুর সংখ্যক তরুণ-তরুণী এ সুযোগের জন্য বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বিসিএস পরীক্ষা সাধারণত তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়—প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মানেই মূল লড়াইয়ে প্রবেশ। এর পর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, আর সবশেষে মৌখিক পরীক্ষায় সফল হলে কাক্সিক্ষত নিয়োগ পাওয়া যাবে। এবারের ফলাফলে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৪৫ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা আনন্দে ভাসছেন, অন্যদিকে যারা পাশ করতে পারেননি তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। অনেকে বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশ করায় তারা অন্তত অনিশ্চয়তার দোলাচল থেকে মুক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ লিখছেন, এবার থেকেই বিসিএস পরীক্ষার ফল প্রকাশে এমন দ্রুততা নিয়মিত হওয়া উচিত।
শিক্ষাবিদ ও ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশ পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমায়। এতদিন ফলাফলের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো, যা অনেক প্রার্থীর জন্য কষ্টকর ছিল। এবারের উদ্যোগ পিএসসির দক্ষতা ও স্বচ্ছতার প্রমাণ বলেও তারা উল্লেখ করছেন।
সব মিলিয়ে ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন একদিকে যেমন নতুন রেকর্ড গড়ল, অন্যদিকে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করল স্বস্তি। এখন সবার দৃষ্টি মূলত লিখিত পরীক্ষার দিকে। সেই পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। লক্ষাধিক প্রার্থীর মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার জনই শেষ পর্যন্ত সফল হবেন—সেই স্বপ্নপূরণের লড়াই এখন আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
৪৭তম বিসিএস প্রিলির ফলাফল দেখতে এখানে ক্লিক করুন
বাংলাবার্তা/এমএইচ