
ছবি: সংগৃহীত
দেশের শিক্ষা খাত এখন ভয়াবহ স্থবিরতায় নিমজ্জিত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে একের পর এক পদ শূন্য হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শেখ হাসিনার পতনের পর প্রশাসনিক অস্থিরতা, কর্মকর্তাদের হঠাৎ বদলি ও অবসরে যাওয়া, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং নীতিনির্ধারক শূন্যতার কারণে আজ এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষক, অভিভাবক থেকে কর্মকর্তা—সবাই এর প্রতিক্রিয়া ভোগ করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে একের পর এক পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ২২ জুলাই দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান রুটিন দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি রেহানা পারভীন নতুন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেলেও, অনেক নীতি নির্ধারণী কাজ এখনও স্থবির। অন্যদিকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম অবসরে গেছেন, তার স্থলাভিষিক্ত এখনও কেউ হননি। এভাবে প্রতিটি স্তরে শীর্ষ নেতৃত্বের অভাব দপ্তরগুলোকে প্রভাবিত করছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানেও দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান নেই। সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান অবসরে যাওয়ার পর থেকে পদটি ফাঁকা। যদিও একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় তা যথেষ্ট নয়। এর ফলে আগামী বছরের পাঠ্যবই মুদ্রণের টেন্ডার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেওয়ার যে ঐতিহ্য রয়েছে, তা এবার হুমকির মুখে। এখনো দরপত্র চূড়ান্ত হয়নি, মুদ্রণ কাজ শুরু হয়নি। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষেই প্রমাণ হয়েছে, নিয়মিত চেয়ারম্যান না থাকলে কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, ৩০ শতাংশ বই নিম্নমানের কাগজে ছাপানো হয়েছে। অথচ এসব বিতর্কিত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে আবারও চুক্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কার্যকর নেতৃত্ব না থাকায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরেও নেতৃত্ব শূন্য। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক পদ খালি, নায়েমে (জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি) একাধিক পদ শূন্য, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক স্তরে পদ খালি।
অবসর সুবিধা বোর্ডে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। শেখ হাসিনার পতনের পর সচিব পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি একেবারে অচল। তিন মাস ধরে সার্ভার বন্ধ। এতে ৪০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সুবিধার টাকা আটকে আছে। অনেকেই মাসের পর মাস দপ্তরে ঘুরেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।
অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবর রহমান স্বীকার করেছেন, শিক্ষা খাতে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের। তার ভাষায়—“অল্প সময়ে পরিবর্তন সম্ভব নয়। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া স্থায়ী সমাধান আসবে না।”
এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষার মান, সুশৃঙ্খল কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ